প্রশ্নফাঁস বিষয়ে প্রশাসনিক কমিটির তদন্ত : ঘাটে ঘাটে গলদ

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-27 04:32:06

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ায় গলদ খুঁজে পেয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত প্রশাসনিক কমিটি। আগামী ৫ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে তারা। জানতে চাইলে কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ার দুর্বলতাগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। এর মধ্য দিয়ে সমস্যা উত্তরণে সুপারিশও আমরা তৈরি করেছি। দুর্বলতাগুলো কি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ায় অনেক মানুষের সংযোগ ঘটে। রাষ্ট্রের গোপন একটি বিষয়ের সঙ্গে এত মানুষের সংশ্লিষ্টতা ঠিক নয়। এতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর কোনো দুর্বলতার কথা তিনি না জানিয়ে বলেন, ৫ এপ্রিলের মধ্যেই কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে করনীয় সম্বলিত প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দেবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় ১২টি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে অভিযোগ আছে। এরপর উচ্চ আদালতে এক রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক এবং প্রশাসনিক নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। প্রশাসনিক কমিটির প্রধান হলেন অধ্যাপক ড. কায়কোবাদ। এরপর প্রশাসনিক কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করাসহ ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ও বিজি প্রেস পরিদর্শন করেন। এছাড়া কমিটির সদস্যরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথাও বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিজি প্রেস পরিদর্শনের সময় মনে হয়েছে- প্রশ্নপত্র ছাপানোর সময় সেখানে বহু মানুষ কাজ করলেও তাদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থাকতে হয়। ফলে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা নয়। তারপরও একধরণের সন্দেহ রয়েছে এবং সেকথা প্রতিবেদনে উঠে আসবে। অরেকজন সদস্য বলেন, বিজি প্রেস কিংবা শিক্ষাবোর্ডে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। তার মতে, ট্রেজারি থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র পর্যন্ত যাতায়াতের সময়টায় বরং নিরাপত্তা কম। এছাড়া প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সিলগালাও দুর্বল থাকে। মূলত এসব জায়গা থেকেই ফাঁস হয়েছে বলে মনে করছি। এসব জায়গায় নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হবে প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে। কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও বিজি প্রেস পরিদর্শন করে যেসব ক্রটি ধরা পড়েছে তা নিয়ে এখন আলাপ-আলোচনা চলছে। একইসঙ্গে প্রশ্নফাঁসের প্রধান জায়গাগুলো শনাক্ত করার জন্য এখনো কাজ করছে কমিটি। কমিটির সদস্যরা আরো বলেন, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরিতে বিজি প্রেসে ২৫০ জনের মতো মানুষ কাজ করে। এটি একটি বড় সমস্যা বলে আমাদের মনে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন কাগজগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বিজি প্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাড়াচাড়া করেন যা ঠিক নয়। প্রশ্ন ফাঁসের জন্য অভিভাবকদেরও দায় আছে। জিপিএ-৫ পাওয়ার আশায় অর্থ দিয়েও অনেক অভিভাবক প্রশ্ন সংগ্রহ করছেন। এর আগে কমিটির সদস্যরা ঢাকা বোর্ড পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার চিত্র পেয়ে বলেছিলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরীক্ষার সময় স্মার্ট ফোন নিষিদ্ধ হলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে তা পাওয়া গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্ত এই বিধানও মানা হয়নি। কমিটির সদস্যরা ঢাকাবোর্ডে গিয়ে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরির প্রক্রিয়া, স্থান এবং নিরাপত্তাগত দিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানতে পারেন একটি নির্দিষ্ট কক্ষে প্রশ্ন প্রণেতা বা পরিশোধনকারীরা কাজ করেন। কাজের সময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ওই কক্ষে পাঠ্যবই ও কলম ছাড়া অন্য কিছু নিতে পারেন না। কিন্ত তারা আরো কিছু সঙ্গে নেন কি না- সেটি নিশ্চিতের কোনো ব্যবস্থা নেই। কমিটির আরেকজন সদস্য জানান, দ্বিতীয় বৈঠকের আগে এই কমিটির সদস্যরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বসেন। তখন একজন শীর্ষ ব্যক্তি নিজেই কমিটিকে নানা তথ্য জানান। এরমধ্যে আছে, স্মার্ট ফোন ব্যবহার এবং প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা সংক্রান্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর