মধুপুরের কলার বাজার, কদর একটু বেশিই  

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 22:53:07

কুষ্টিয়া: ভোর হলেই বিক্রির জন্য বিভিন্ন জাতের কলা নিয়ে মানুষ ছুটে আসে এই বাজারে। কেউবা ভ্যান ভর্তি করে, কেউ সাইকেলের দুপাশে বেঁধে, অনেকেই আসে ট্রলি ভর্তিসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে। আর এখানকার কলার কদর সব সময়ই বেশি। তাইতো চাহিদা অনুযায়ী এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে পাঠানো হয় এ এলাকার কলা।

বলছিলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধুপুর বাজারের কথা। এ বাজারটি জেলার ইবি থানার শেষ সীমানায় হওয়ায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝিনাইদহ জেলার চাষিরা বিক্রির জন্য এখানে কলা নিয়ে আসেন। নির্দিষ্ট দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই কলা বেচাকেনা হয় এখানে।

গত ২৫ বছর ধরে এই বাজারের কদর একটুও কমেনি। বরং বেড়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ইজারা দেন উপজেলা প্রশাসন। এ বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ৩৭ লাখ টাকায়। আশপাশের ৫ জেলার চাষিরা কলা নিয়ে এই বাজারে জড়ো হয়।

কলার বাজারটি প্রসিদ্ধ হওয়ায় দিনের পর দিন এর বিস্তৃতি বেড়েই চলেছে। জায়গার অভাবে বাজারের রাস্তার দুধারেও বেচাকেনা করা হয়।

এদিকে চাহিদা বেশি থাকার কারণে এ অঞ্চলে কলার আবাদও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কলার হাট হিসেবে খ্যাত মধুপুর বাজারের সুনাম সারা দেশে থাকলেও এ হাটের তেমন উন্নয়ন হয়নি। হাটের দিন জায়গার অভাবে রাস্তার উপর বেচাকেনা হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, তিনি বিভিন্ন গ্রাম থেকে কলা কিনে নসিমনযোগে হাটে আসেন তা বিক্রি করতে। এ বছর লাভ ভালো পেয়েছেন।

মধুপুর বাজারে গিয়ে কথা হয় কলা চাষি সাবান আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, এবার কলা বিক্রি করে চাষি যে দাম পেয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সপ্তাহের শুরুতে কলার কাঁদি (স্থানীয় ভাষায় কলার ছড়া) প্রতি দাম পেয়েছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এ রকম দাম আগে কোনো বছরে চাষিরা পাননি।

মধুপুর বাজারের বন্দোবস্তকারী কাজী আবদুস সাত্তার। তিনি ২৫ বছর ধরেই এই বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশাল এই কলার বাজারের সব পরিবহনের দেখভাল করেন তিনি। ব্যবসায়ীরা কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় কীভাবে সরবরাহ করবেন মূলত সেটাই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। চাষি ও ব্যবসায়ীরা তার ওপর আস্তা রাখেন।

কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই হাটে প্রচুর টাকার কলা কেনাবেচা হয়। ছোট বড় ট্রাকগুলো তিনি ঠিক করে দেন। একেকটা ট্রাকে অন্তত ৭ থেকে ৮ জন ব্যবসায়ীর কলা যায়। কলার কাঁদিতে হাসুয়া দিয়ে কেটে বিশেষ ধরনের চিহ্ন করা হয়। এতে এক ব্যবসায়ীর কলা অন্য ব্যবসায়ীর কেনা কলার সঙ্গে মিলে যায় না।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, মধুপুর হাটে চম্পা ও সবরি কলা বেশি ওঠে। প্রতিদিন অন্তত ছোট বড় ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক কলা হয়। গত সোমবার চম্পা কলার কাঁদি (প্রায় ১৬০ পিচ) ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সবরি কলা বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা দরে। ১৫ দিন আগে চম্পা ও সবরি বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে। আস্তে আস্তে দাম পড়ে যাচ্ছে। তবে এই ১৫ দিনে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে।

ঝিনাইদহের শ্রীরামপুর থেকে এসেছেন কলা চাষি সেলিম রেজা। তিনি জানান, এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে কলা চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে লাভ পেয়েছেন।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন জানান, এ বছর কলার দাম পেয়ে চাষিরা খুশি। মধুপুর বাজারে কলা বিক্রি করে চাষি ও ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হয়েছে। ওই বাজারে মাঝে মাঝে গিয়ে তদারকি করা হয়। এছাড়া মাঠে গিয়েও কলার রোগ প্রতিরোধ নিয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া এ অঞ্চলের কলার চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর