বিশাল স্বপ্ন বুকে ধারণ করে সন্তানকে যিনি স্নেহ-মমতার শীতল ছায়ায় লালন-পালন করেন, সন্তানের আবদার পূরণে নিজের শত ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দেন- তিনি আমাদের সবার প্রাণাধিক প্রিয় মা।
বলা হয় সেই মা ও সন্তানের মধ্যে ভালোবাসার কোনো তুলনা চলে না। কিন্তু সবসময়ই কি তাই? ময়মনসিংহে মানবতার জন্য এক ভালোবাসার গল্প যেন হার মানিয়েছে সেই মা-সন্তানের ভালোবাসাকেও।
ভালোবাসার টানে ভিন্ন ধর্মের শতবর্ষী এক বৃদ্ধাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে সাত বছর ধরে লালন পালন করছেন এক নারী। এ যেন ভালবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
সাত বছর আগের ঘটনা। বৃষ্টিস্নাত এক সন্ধ্যায় হেঁটে নওমহল এলাকার নিজ বাসায় ফিরছিলেন আনোয়ারা বেগম। হঠাৎ তার চোখ পড়ল এক বৃদ্ধার দিকে। দেখলেন, রাস্তার ধারে ওই বৃদ্ধা একবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন আবার পড়ে যাচ্ছিলেন। এমন অবস্থা দেখে তার কাছে গেলেন আনোয়ারা। জানতে পারলেন ছেলে তাকে বসিয়ে রেখে চলে গেছে এরপর আর নিতে আসেনি। এরইমধ্যে আশেপাশে ভিড় জমে গেলেও বৃদ্ধার সাহায্যে কেউ-ই এগিয়ে আসেনি।
এক পর্যায়ে একটি রিকশা ডেকে বৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে নগরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে খুঁজতে থাকলেন চারুবালার স্বজনদের। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ঘুরেও দেখা পেলেন না স্বজনের। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধা চারুবালাকে সঙ্গে নিয়ে নিজ ঘরে ফেরেন আনোয়ারা। সেই থেকে এখন মাতৃহারা আনোয়ারার কাছে চারুবালা চক্রবর্তীই তার মা।
আনোয়ারা বেগম বলেন, তাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে আমি বাসায় নিয়ে আসি। আনার পর প্রথমেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি নগরের নাটকঘর লেন এলাকায় থাকেন চারুবালার স্বজনরা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফেরত নেয়নি সন্তানরা। এমনকি গত সাত বছরে কোনো সন্তানই তাকে দেখতে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, ছোট থেকে যিনি সন্তানদের লালন-পালন করে মানুষ করলেন তাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়াটা খুবই অমানবিক। বিষয়টি আমার খারাপ লেগেছে। তাই তাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আমরা দু’জনই একে অপরকে মা বলে ডাকি।
আনোয়ারার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আকিকুল ইসলাম বলেন, সারাদিন শত কাজের মাঝেও আমার স্ত্রী তার নিয়মিত সেবা যত্ন করে গেছেন। এমন ভালোবাসা দেখে আমার স্ত্রীকে সহযোগিতা করাই আমার দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছি। এখন অন্যদের মতো মা চারুবালাও আমাদের পরিবারের একজন সদস্য।
জীবনের সবটুকু দিয়ে ভালবেসে যে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন চারুবালা, তারাই জীবনের গোধূলি বেলায় মাকে ফেলে গেছেন রাস্তায়। তবুও সন্তানদের অভিশাপ না দিয়ে মঙ্গল কামনা করেন চারুবালা। সব সময় বলেন, সন্তানরা যেন ভালো থাকে সবসময়। এই বুঝি মা, মায়েদের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।