রংপুরে শুঁটকিতে বছরে দেড় কোটি টাকা লোকসান

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-31 11:19:11

রংপুরে শুঁটকি আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। দিন দিন লোকসানের বোঝা ভারি হওয়ায় কমে এসেছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা। ব্যবসায় মন্দাভাবের কারণে অনেকেই শুঁটকি ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। শুঁটকির মৌসুমে ব্যবসায় ভাটা পড়ায় প্রতি বছরে এক থেকে দেড় কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী মৌসুমেও শুঁটকিতে লোকসানের আশঙ্কায় এখানকার আড়তদাররা।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের আরকে রোড ঘাঘটপাড়া শুঁটকির আড়তে কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা লোকসান আশঙ্কার কথা জানান।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলা বছরের অগ্রহায়ণ থেকে আশ্বিন-কার্তিক মাস পর্যন্ত শুঁটকির মৌসুম। এই সময়ে প্রতি বছর এখানকার চার আড়তদার অন্তত তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকার শুঁটকি কেনা বেচা করেন। কিন্তু এবার আড়াই কোটিও পার হয়নি। এই লোকসানকে তারা বড় ধরণের ধাক্কা হিসেবে দেখছেন।

 ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের আরকে রোড ঘাঘটপাড়া শুঁটকির আড়ত

এখন ঘাঘটপাড়ায় আগের মতো চলতে ফিরতে নাকে তেমন শুঁটকির ঘ্রাণ ভেসে আসে না। এপাশ ওপাশ থাকালেও খুব বেশি দোকান চোখে পড়ে না। কারণ গত কয়েক বছরে লোকসান সামাল দিতে না পেরে এখানকার ৪২টি দোকান থেকে কমতে কমতে এখন সংখ্যা ১৮-তে এসে দাড়িয়েছে। এক সময় রমরমা ব্যবসা ছিল আড়ত জুড়ে। কিন্তু এখন শুঁটকির মৌসুমেও নেই ক্রেতা ও পাইকারদের আনাগোনা। বর্তমানে যারা এই শুঁটকি আড়তে ব্যবসা ধরে রেখেছেন, তারাও লোকসান ঝুঁকিতে আছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বস্তায় বস্তায় সাজানো চ্যালা, লইট্যা, ফ্যাসা, কাচকি, ভেটকিসহ নানা জাতের সামুদ্রিক ও দেশী মাছের শুঁটকি। ক্রেতার চাপ না থাকায় শুঁটকি পরিচর্যায় ব্যস্ত অনেক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমদানি করা অন্তত চল্লিশ প্রকারের শুঁটকি এখানে রয়েছে। রংপুর জেলাসহ লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এই আড়ত থেকে শুঁটকি কিনেন।

শুঁটকির আড়তে কথা হয় সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। বস্তায় রাখা বেশকিছু নষ্ট  শুঁটকি বাছাই করছিলেন তিনি। বস্তার তলানিতে কিছু শুঁটকি গুড়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তার লোকসানের অংকটা বেড়ে যাবে বলে জানান সাইফুল। তিনি বলেন, বেচা-বিক্রি একেবারে কম। দোকানে রাখতে রাখতে শুঁটকির ওজনও কমে আবার নষ্টও হয়। এতে তো শুধু লোকসান হচ্ছে।

বস্তায় বস্তায় সাজানো চ্যালা, লইট্যা, ফ্যাসা, কাচকি, ভেটকিসহ নানা জাতের সামুদ্রিক ও দেশী মাছের শুঁটকি

শুঁটকির আড়তদার লুৎফর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, শুঁটকির মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত পঞ্চাশ থেকে সত্তর হাজার করে বিক্রি হতো। এখন সেখানে দশ হাজার টাকার উপরে বেচা-কেনা নেই। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরজন্য পেয়াজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়াও কিছুটা দায়ী বলে জানান এই আড়তদার।

এই ব্যবসায়ীর মতে, এখানকার চারজন আড়তদার প্রতি বছর চার কোটির ঊর্ধ্বে শুঁটকি বেচা-কেনা করতেন। কিন্তু এখন শুঁটকির মৌসুমেও বেচা কেনা হয় না। এখন বছরে এক থেকে দেড় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। খুচরা-পাইকারি মিলে দিনে যেখানে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো, সেখানে ১৫ হাজারও হয় না।

এব্যাপারে শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির হাজী আজগর আলী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি এত খারাপ হবে আগে ভাবতে পারিনি। দিন দিন বাকি বিক্রির পাল্লা ভারি হচ্ছে। সাথে লোকসানও লেগেই আছে। একারণে অনেকেই ব্যবসা বদল করেছে। এখন বছরের বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত একটু বেচাকেনা ভালো হয়। বাকি সময়টা কোনরকমে চলে।

এদিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজ শেখ বলেন, ঘাঘটপাড়ায় চৌদ্দটি শুঁটকির পাইকারি দোকান আর চার আড়ত রয়েছে। সবার ব্যবসার একই অবস্থা। দেশী পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব শুঁটকিতে পড়েছে। এমন থাকলে আগামী মৌসুমেও শুঁটকির ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তবে পেয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সবাই উপকৃত হবেন তিনি জানান ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর