তিন সিটিতে উত্তপ্ত ভোটের মাঠ, সংঘাতের আভাস  

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-25 15:10:09

 

হযরত শাহজালাল (র:) পূণ্যনগরী সিলটে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র তাণ্ডব, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কার্যালয়ে আগুন, রাজশাহীতে নির্বাচনী সভায় ককটেল বিস্ফোরণ, বরিশাল সিটিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার আতঙ্ক উত্তাপ ছড়িয়েছে তিন সিটিতে।

খুলনা ও গাজীপুরে তুলনামূলক ‘শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনের পর এবার তিন ভোটের নগরীতে নির্বাচনের সাত দিন আগে মাঠের উত্তপ্ততা, আতঙ্ক জনমনেও ভোটের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দ্বিতীয় ধাপের এ তিন সিটি নির্বাচনে তাই সংঘাতের আভাস পাচ্ছে বিভিন্ন মহল।

সিলেটে জামায়াতের ‘হঠাৎ’ উত্থান:

গত শুক্রবার শান্তির নগরী সিলেটে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীরা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিদবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের হঠাৎ এ সশস্ত্র হামলায় উত্তপ্ত সিলেটে। হামলাকারীদের শনাক্ত করা গেলেও এখনো পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ওই একই স্থানে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা।

রোববার ভোরে বুরহান উদ্দিন-গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থাপিত আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আগুন নেভানো গেলেও মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচনী ব্যানার, পোস্টার, লিফলেটসহ জরুরি কাগজপত্র পুড়ে গেছে।

শুধু আওয়ামী লীগ নেতারা নয় শুক্রবার জামায়াতের সশস্ত্র হামলার মুখে পড়েন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরীর বোনজামাই ও তাজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী হাসান আব্দুল গণি। ওই দিন নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিদবাজার জামে মসজিদের ভেতর মেয়র প্রার্থী জামায়াতের মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করছিল দলটির কয়েকজন নেতাকর্মী। এ সময় হাসান আব্দুল গণি তাদের মসজিদের বাইরে গিয়ে লিফলেট বিলি করতে বলেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তারা। এ ঘটনার কিছু সময়ের মধ্যে শিবির ক্যাডাররা মুখোশ পরে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় তিনি প্রাণ বাঁচাতে পাশের মহানগর যুবলীগ নেতার মালিকানাধীন মৌরশী রেস্টুরেন্টে আশ্রয় নেন। তাকে না পেয়ে দুর্বৃত্তরা রেস্টুরেন্টে ভাঙচুর চালায়। প্রকাশ্যে এ ধরনের হামলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আশপাশের ব্যবসায়ীরাসহ সাধারণ মানুষ।

হামলার ঘটনা অস্বীকার করে মেয়র প্রার্থী জামায়াতের মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমার কর্মীরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তার পরও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’

এর কয়েক দিন আগে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তির ওপরও শিবির হামলা চালায় বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের। অল্পের জন্য সেদিন শিবিরের হামলা থেকে বেঁচে যান ওই যুবলীগ নেতা।

জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না এসব কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে। এসব কারণে ক্রমেই নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। সুষ্ঠু পরিবেশের নির্বাচন আমরা সবাই যে আশা করছি, তা বিঘ্নিত হবে।’

এদিকে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর নেতাকর্মীকে ধরপাকড়সহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। প্রতিদিনই পুলিশ কোনো না কোনো বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে দক্ষিণ সুরমার ঝালপাড়া থেকে রাসেল ও সুমন নামের দুই কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেলেও পুলিশ স্বীকার করেনি। ওই ঘটনার পর প্রার্থীসহ ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘নিখোঁজ’ কর্মীদের সন্ধানের দাবিতে মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে চাপের মুখে পুলিশ আটকের কথা স্বীকার করে নেয়।

ফোনালাপ ফাঁসে তোলপাড় রাজশাহীতে:

গত ১৭ জুলাই রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া বটতলায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচনী পথসভায় তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সভা চলাকালে চারটি মোটরসাইকেলে আটজন যুবক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরপর তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বিএনপির রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মতিউর রহমান মন্টু ও বিএনপির সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপের অডিও রেকর্ড।

রেকর্ডটি নিয়ে পুলিশের দাবি, হামলা চালানোর পর এই কথোপকথন কেন্দ্রীয় কমিটির সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর মধ্যে হয়েছে।

‘আগামীর রাজশাহী’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে রেকর্ডটি প্রকাশ পাওয়ার পর রাজশাহীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের অভিযোগ,  বিএনপি এই নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করছে।

এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে পথসভায় বোমা হামলার দায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছেন, ‘গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মন্টু সব খুলে বলেছেন। এই বোমা হামলাটি যে তাদের লোকজনই করেছিল, সেই ঘটনাটি মন্টটু মুঠোফোনে দলের সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকে জানিয়েছেন। আর এই কথাটিও স্বীকার করেন তিনি।’

তবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, প্রযুক্তির এ  যুগে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এ ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য না। এটা তথ্য প্রযুক্তির কারসাজি।

বরিশালে আতঙ্কে বিএনপি কর্মীরা:

এতদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে দলের সমর্থকরা দফায় দফায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় অংশ নিলেও রোববার সকাল থেকে সেটা কমেছে অনেকাংশে। দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না গণসংযোগে। গ্রেফতার আতঙ্কে পিছু হটতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।

মহনগর বিএনপির সহকারী সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও গণসংযোগ করতে গেলে সেটা কম সময়ের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা নামলেই থামিয়ে দেওয়া হয়।

গ্রেফতার আতঙ্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরা ভয়ভীতি পাচ্ছেন। শুক্রবার আমাদের যুবদলের নেতা কবীরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পরদিন শনিবার বিশেষ ক্ষমতায় আইনে গ্রেফতার করে দেখিয়ে কোর্টে চালান করে দিয়েছে। তার আগে শুক্রবার বরিশাল মহানগর জামায়াতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মো. বাবরকে একইভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মতো সরব থেকে মাঠে অবস্থান করতে পারছে না বিএনপি। শুধু তাই নয়, বরিশাল শহরজুড়ে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর ব্যানার ফেস্টুন বা পোস্টারও নগন্য। নগরীর বেশিরভাগ জায়গাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে

এ সম্পর্কিত আরও খবর