আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ সুধা মিয়ার ৭৯তম জন্মদিন রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি)।
খ্যাতিসম্পন্ন এই ব্যক্তিত্বের জন্মদিন উদযাপন করতে নানা আয়োজন রয়েছে তার জন্মস্থান রংপুরে। ক্ষণজন্মা এই পুরুষকে রংপুরের মানুষ সুধা মিয়া নামে ডাকতেন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর টাউন হল চত্বরে শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিষয় ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ড. ওয়াজেদ স্মৃতি সংসদ।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা রয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে.এম তারিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান।
এছাড়াও রংপুর জেলা প্রশাসন, পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সংস্থা ড. ওয়াজেদ মিয়ার ৭৯তম জন্মদিনকে ঘিরে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে তার জন্মস্থান পীরগঞ্জের লালদিঘী ফতেহপুরে ড. ওয়াজেদ মিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্মৃতিচারণ, ফাতেহ পাঠ, কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও গরীবদের মাঝে খাবার বিতরণসহ জেলার বিভিন্নস্থানে আলোচনা সভা, শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতার কর্মসূচি।
ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবনী:
বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী বিশ্ববরেণ্য এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া ও মাতা মরহুমা ময়জুনেসার চার পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ।
৬৭ বছর বয়সে তিনি ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি তার সমগ্র কর্মজীবনে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
ড. ওয়াজেদ মিয়ার পড়ালেখা:
তিনি ১৯৫৬ সালে রংপুর শহরের সরকারি জিলা স্কুল থেকে ডিস্টিংশনসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।
রাজনীতিতে ওয়াজেদ মিয়া:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-’৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতারবরণ করেন। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান।
আণবিক শক্তি কমিশনে ওয়াজেদ মিয়া:
১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৩-’৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়।
বিয়ের পিড়িতে ওয়াজেদ মিয়া:
তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসার জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক। তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ।
লেখালেখিতে ওয়াজেদ মিয়া:
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।
সংগঠক ওয়াজেদ মিয়া:
তিনি বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং ঢাকার বৃহত্তম রংপুর কল্যাণ সমিতি, উত্তরবঙ্গ জনকল্যাণ সমিতি, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম, বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদ এবং রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার মির্জাপুর বছির উদ্দিন মহাবিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।