কক্সবাজারে পরিবেশবান্ধব গ্যাস সরবরাহ করবে জাতিসংঘ

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-19 18:57:44

কক্সবাজার অঞ্চলে বৃক্ষ উজাড় রোধ করতে ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা মিলে শুরু করলো সেইফ প্লাস প্রকল্প।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকাস্থ জাতিসংঘের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সেইফ একসেস টু ফুয়েল অ্যান্ড এনার্জি প্লাস লাইভলিহুডস (সেইফ প্লাস) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-এর যৌথ উদ্যোগে নেওয়া এক প্রকল্প। এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে, যেমন: তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও স্টোভ বিতরণ, পুনঃবনায়ন এবং লাইভলিহুডস কার্যক্রমের দ্বারা অধিকতর খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কাজ করা যাবে।

এলপিজি স্টোভ ও গ্যাস বিতরণের ফলে মানুষের জ্বালানি কাঠের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। ফলে, জ্বালানি কাঠ ব্যবহারের মাধ্যমে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি রোধ করা যাবে। এই পুনঃবনায়ন কার্যক্রম বন সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং সেইসাথে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কাজ করবে। লাইভলিহুড ও সেল্ফ রিলায়েন্স কার্যক্রমের মাধ্যমে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়, যার মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে।

বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটির রূপরেখা তৈরি করা হয়। ইতোপূর্বে, মানবিক প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করা হতো। এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেইফ প্লাস প্রকল্পটি এখন একটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে রূপ নিলো, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন সাধন করা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশ-বিষয়ক ব্যাপারগুলো চিহ্নিত করতে ও এ নিয়ে কাজ করতে জাতিসংঘকে সাথে পেয়ে আমার মন্ত্রণালয় অত্যন্ত খুশি। আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের এ ব্যাপারে আরও সহযোগিতা করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করছি।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতিসংঘ উইং-এর প্রধান সুলতানা আফরোজ জাতিসংঘের তিন সংস্থাকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার ও এ দেশের জনগণ যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে তা দৃষ্টান্তমূলক। এখন এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব বাংলাদেশ যেন এ বোঝা একাই বহন না করে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এই সংকটের টেকসই সমাধান আসে।

সুলতানা আফরোজ সেইফ প্লাস প্রকল্পের প্রতি সরকারের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রকল্পটি কক্সবাজারে সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যতদিন না রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন শেষ হবে, ততদিন পর্যন্ত সেইফ প্লাস প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া উচিৎ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএও বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন বলেন, সেইফ প্লাস জাতিসংঘের এই তিনটি সংস্থা ও সরকারি সংস্থাগুলোর কারিগরি দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যার মাধ্যমে কক্সবাজারের জনগোষ্ঠীর নিত্যনতুন প্রয়োজনগুলো মেটানো হবে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম বাংলাদেশ-এর চিফ অফ মিশন গিয়োর্গি গিগাওরি বলেন, শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানবিক ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই সেইফ প্লাসকে একটি প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করতে পেরে আইওএম অত্যন্ত খুশি।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রিচার্ড রেগান বলেন, কক্সবাজারের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চাবিকাঠি হলো আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা।

চলতি বছরজুড়ে সেইফ প্লাস-এর মাধ্যমে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে লাইভলিহুডস কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করা হবে, কৃষকদের অধিক চাহিদাসম্পন্ন সবজিগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে এবং এর পাশাপাশি চলতে থাকবে পুনঃবনায়ন কার্যক্রম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর