অপরাধ কমিয়ে নাগরিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ৬৪টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসায় সিটি করপোরশন। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ছয়মাস না যেতেই ক্যামেরাগুলো অকেজো হতে শুরু করে। তবে যেটা অকেজো হয়েছে, তা আর সচল করা হয়নি। ফলে গত তিন বছরে অকেজো হয়ে পড়েছে ৪৫টি ক্যামেরা। আর তাই প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
মহানগর পুলিশ বলছে- গত পাঁচ মাসে নগরীর ব্যস্ত সড়কের পাশের কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা, অটোরিকশায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের স্ত্রীকে প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি ও তা ঠেকাতে গিয়ে শিক্ষককে অপহৃত হওয়ার মতো ঘটনা উদঘাটনে তারা প্রযুক্তিগত কোনো সুবিধায় পায়নি। ফলে অপরাধ সংগঠন হলে অপরাধীদের শনাক্ত করতেও ঢের সময় লাগছে পুলিশের। নগরবাসী এ নিয়ে পুলিশকে দায়ী করলেও সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম-প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ক্যামেরাগুলো অকেজো। যেগুলো সচল রয়েছে, সেখান থেকে ফুটেজ পেতেও পুলিশকে অপেক্ষা করতে হয়। কারণ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সিটি করপোরেশনের দখলে। অপরাধী দলীয় লোক হলে মাঝে-মধ্যে ফুটেজ গায়েবও হয়ে যায়।’
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। আগামী মাসেই আমরা ক্যামেরাগুলো সচল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।’
সিটি করপোরশনের তথ্যমতে, নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ও মহানগর পুলিশের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪-২০১৫ সালে নগরীতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে তা বাস্তবায়ন হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি পয়েন্টে ও ৩০টি ওয়ার্ডে লাগানো হয় সিসি ক্যামেরা। স্থাপিত এসব ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য দেখার জন্য খোলা হয়েছিল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ক্যামেরা সরাসরি রাজশাহী মহানগর পুলিশ মনিটরিং করার কথা। তবে গত বছর এটি সিটি করপোরেশনের অধীনে চয়ে যায়।
সরেজমিনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্যামেরায় ভিডিও আসছে না। অনেক ক্যামেরা বন্ধ পড়ে আছে। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে ১৯টি ক্যামেরাতে দেখা মিলছে বিভিন্ন দৃশ্য। দুটি প্যানেলের মাধ্যমে ৬৪টি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর মধ্যে একটি প্যানেলে ৭টি এবং আরেকটিতে ১২টি ক্যামেরা সচল দেখা গেছে। এর মধ্যে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় ৩টি, গনকপাড়া তুলাপট্টি এলাকায় ৩টি, বিনোদপুর এলাকায় ৩টি, ভদ্রা মোড় এলাকায় ২টি, ঢাকা বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি, কাশিয়াডাঙা এলাকায় ২টি ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ৫টি ক্যামেরা চালু। বাকিগুলো বন্ধ।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানিয়া খাতুন বলেন, ‘এখন ১৯টি ক্যামেরা সচল রয়েছে। সেটাও স্পষ্ট নয়। একেবারে ভাল এবং ক্লিয়ার দৃশ্য আসে চার থেকে পাঁচটি ক্যামেরায়। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে চাইলেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে খুব বেশি তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা চাই এগুলো সচল থাকুক। আগে আমাদের কার্যালয়েই সার্ভার ছিলো। এখন এটি তাদের (সিটি করপোরশন) আওতায় আছে। কোনো তথ্যের দরকার হলে আমরা সেখানে গিয়ে নিয়ে আসি। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
রাজশাহী সিটি করপোরশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তারা আগামী দু’বছর এটি দেখভাল করবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যেই নতুন ক্যামেরা বসানো হবে।’