প্রকৃতিতে বইছে ফাগুনের হাওয়া। ঝিরি ঝিরি বাতাসে দুলছে ৫০০ প্রজাতির ফুল। কাঁটায় ভরা ক্যাকটাস থেকে লাল টুকটুকে গোলাপ, সবই মিলছে একই স্থানে। রাজশাহী নগরীর মনিবাজার চত্বরে পাঁচ দিনব্যাপী পুষ্পমেলায় অজস্র ফুলের সমাহার দৃষ্টি কাড়ছে নগরবাসীর।
ফুলপ্রেমীরা মেলায় আসছেন, কিনছেন ফুলসহ পছন্দের গাছটিও। বাড়ির ছাদ বা বেলকনির টবে সযত্নে ঠাঁই পাবে তা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে মেলা। দিনে স্বাভাবিক ভিড় থাকলেও দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে মেলাপ্রাঙ্গণে বাড়ছে ভিড়। সন্ধ্যার পর হয়ে পড়ছে জনাকীর্ণ। যেন পুষ্পমেলায় উড়ছে ‘মানবভ্রমর’!
পহেলা ফাল্গুনে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের দিনে বসেছে পুষ্পমেলা। রাজশাহীর বৈকালী সংঘ মেলার আয়োজক। পৃষ্ঠপোষকতা করছে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড। বৈকালী সংঘ প্রতিবছরই এই মেলার আয়োজন করে থাকে। এবারের আয়োজন ১৫তম। তবে পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবসে শুরু হওয়ায় এবারের মেলার আকর্ষণ ভিন্ন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হবে।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, এবছর মেলায় অংশ নিয়েছে ২৪টি স্টল। তারা সমাহার ঘটিয়েছে ৫০০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফুলের। শুধু গোলাপেরই রয়েছে ২৫০টি প্রজাতি। এছাড়া গাঁদা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, সাদাপাপড়িসহ ডালিয়া, ক্যানচো, ইনসেফিয়া, পেঞ্জি, পানচাটিয়া, পিটুনিয়া, ইফোরভিয়া, স্টোক, ড্যানথাস, ন্যাশটেশিয়াম, ভারবেনা, কসমস, জিপসি, কানেসান, সিনারিয়া, লিলিয়ামের মতো দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির শত শত ফুল এখন মেলা প্রাঙ্গণ দুলছে বসন্ত বাতাসে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এবং সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। সোমবার সকালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন গোলাপপ্রেমী বিপাশা চৌধুরী। নগরীর টিকপাড়া এলাকায় এই গৃহিণীর বাড়ি।
তিনি জানান, আগের দিন রোববারও তিনি মেলায় গিয়েছিলেন। ৮ প্রজাতির ফুলের গাছ কিনে নিয়ে গেছেন। সোমবার সকালে বাচ্চার স্কুল শেষে আবার এসেছে। এবার কিনবেন শুধু গোলাপ ফুলের গাছ।
গৃহিণী বিপাশা বলেন, ‘আমার বাড়ির ছাদে ৩২ প্রজাতির গোলাপ রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ ফুলের গাছ লাগিয়ে ছাদবাগান সমৃদ্ধ করা আমার নেশা হয়ে গেছে। প্রতিবছর মেলা থেকেই নতুন প্রজাতির গোলাপ কিনি। এবার নতুন প্রজাতির মধ্যে সবুজ গোলাপ কিনব।’
মেলায় ঘুরছিলেন রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. মনিরুল হক ও তার স্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শিরিন সুলতানা। এই দম্পতি জানান, ১৩ বছর ধরে তারা ছাদবাগান করেন। প্রতিবছরই এ মেলায় এসে নতুন নতুন প্রজাতির ফুলগাছ সংগ্রহ করেন। এবারও বেশকিছু ফুলগাছ কিনতে এসেছেন।
অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে ডা. মনিরুল হক বলেন, ‘রাজশাহীতে একসঙ্গে এতো ফুলের সমাহার আর কোথাও হয় না। মেলায় আসলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সুবাসে মন বিমোহিত হয়। সত্যি অসাধারণ!’
এদিকে, মেলায় প্রথম দু’দিনে ভালো বিক্রি হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে বেচাকেনা কম বলছেন স্টল মালিকরা। মেলায় স্টল বসিয়েছেন মেসার্স মায়ের দোয়া নার্সারি। তাদের স্টলে প্রায় ৪০০ প্রজাতির ফুলগাছ রয়েছে। এর মধ্যে গোলাপই আছে ১৩৬ প্রজাতির।
নার্সারির বিক্রয়কর্মী রনি আহমেদ বলেন, ‘সকালের দিকে মেলায় বেশি আসছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা ঘুরছে, দেখছে; কিনছে কম। তবে বিকেলের পর যারা আসছেন, তারা গাছ কিনছেনও।’
‘আহম্মেদ ভিলা নার্সারি’ শুধু গোলাপেরই প্রজাতি এনেছে ২০০টি। এই স্টলের বিক্রয়কর্মী রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুলগাছ বিক্রি করছি।’
আর ফাল্গুনি নার্সারির মালিক আবদুল বারী জানালেন, ‘তার বিক্রি দৈনিক ১০ হাজার টাকা।’
মেলায় স্টল দিয়েছে ফুলগাছ ছাড়াও গাছের বীজ, সার, কীটনাশক এবং টব বিক্রির দোকানও। সম্রাট নার্সারি অ্যান্ড বীজ ভাণ্ডার এমন স্টলই দিয়েছেন। এর মালিক এমএ সালাম জানান, তার দোকানে রাসায়নিক ও কীটনাশক সার রয়েছে। কেঁচো কম্পোস্ট সারও আছে। আছে ফুল গাছের বীজও। তারও বিক্রি চলছে বেশ ভালো।
আয়োজক বৈকালী সংঘের সভাপতি মনিরুজ্জামান ছানা জানান, নতুন প্রজন্মকে হাজারো প্রজাতির ফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এই মেলার আয়োজন। এর সঙ্গে থাকছে শিশুদের আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, নৃত্য, দেশের গান ও ছড়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান মঞ্চে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।