ঠাণ্ডা কাশি জ্বরে ভুগছে দেশ

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 23:07:17

বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টের বাসিন্দা রুপালী বেগম। রাত তিনটা, হঠাৎ পাশে ঘুমানো মেয়ের গোঙ্গানির শব্দ। গায়ে হাত দিয়ে দেখেন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। থার্মোমিটারে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা। দ্রুত প্যারাসিটামল খাইয়ে ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মেয়ের কপালে ধরলেন। শুধু মেয়ে না, রুপালী বেগমের বোনও দুই দিন থেকে জ্বরে আক্রান্ত।

এ দৃশ্য শুধু রুপালী বেগমের পরিবারের নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে ঠাণ্ডা জ্বর কাশির এমন প্রার্দুভাব। সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মুখে। তখন বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে। সব মিলিয়ে ১০৮ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৩৮৪। মারা গেছে ৬১ জন। আর এ কারণ হিসেবে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ, তাপমাত্রার অস্বাভাবিক তারতম্য ও মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একদিকে জলবায়ুজনিত তারতম্য অন্যদিকে বায়ুদূষণ এবার রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার মাত্রা বাড়ানো খুবই জরুরি। শিশু ও বয়স্কদের জটিলতা বেশি দেখা যায়। পরিবারের অন্যদের উচিত তাদের দিকে বেশি নজর রাখা। এ ছাড়া আগে থেকেই যারা ক্রনিক রোগে ভুগছে তাদের ক্ষেত্রেও এমন মৌসুমী রোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ সালে এই তিন ধরনের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখ সাত হাজার ৩৫৯ জন আর ওই বছর মৃত্যু হয় ৩৮ জনের। পরে ২০১৬-১৭ সালে আক্রান্ত হয় ৬১ হাজার ৫৬৪ জন, মারা যায় ১১ জন, ২০১৭-১৮ সালে আক্রান্ত হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৬৭ জন আর মারা যায় ২০ জন, ২০১৮-১৯ সালে আক্রান্ত হয় ৮৬ হাজার ৭৫৯ জন এবং মৃত্যু হয় ১১ জনের।

আর চলতি মৌসুমে গত ১ নভেম্বর থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ১০৮ দিনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৩৮৪ জন এবং মৃত্যু ঘটেছে ৬১ জনের। এর মধ্যে এবার গত ১ নভেম্বর থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৮৭ হাজার ৭৬০ জন, ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দুই লাখ ছয় হাজার ৫৬০ জন এবং ঠাণ্ডাজনিত অন্যান্য রোগে দুই লাখ ২৭ হাজার ২৮ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের রোগে মৃত্যু ঘটেছে ২২ জনের, ডায়রিয়ায় ৯ জনের ও অন্যান্য শীতজনিত রোগে ৩০ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বার্তা২৪.কম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মানুষ ঠাণ্ডা কাশি জ্বরে ভুগছে। এটাকে সিজনাল জ্বর বলে। এখন দেখবেন কখনও গরম, কখনও ঠাণ্ডা-যা মানুষের শরীরের জন্য ভালো নয়। এ কারণে শীত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে পরের বছরের মার্চ পর্যন্ত এই শীতজনিত রোগের হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। ৬৪ জেলা ও ২৯৬টি উপজেলা পর্যায় থেকেও তথ্য আসছে প্রতিদিন। আমরা শীতজনিত রোগের ক্যাটাগরিতে রাখা ওই হিসাব তিনটি ভাগে বিভাজন করি। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়রিয়া ও শীতজনিত আরো অন্যান্য রোগকে হিসাব করা হয়। এতে এবার দেখা গেছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শীতজনিত রোগে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু অনেক বেশি।

মানুষকে সচেতন হওয়া র আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সিজন পরিবর্তনের সময়টাতে মানুষের সচেতন থাকা জরুরি। হালকা গরম পানি খাওয়া ও ধুলা-বালি থেকে দূরে থাকা উচিত।বিশেষ করে বৃদ্ধা ও শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত।      

এ সম্পর্কিত আরও খবর