রংপুরে শহীদদের নামে সড়কের নামকরণ দাবি

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-09-01 05:19:44

ব্রিটিশ শাসন ও পাকিস্তানী শোষণ থেকে মুক্তির সংগ্রামে রংপুর এক অন্যন্য নাম। স্বাধীনতার জন্য এ জেলার মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস চিরস্মরণীয়। এখানকার একঝাঁক সাহসী সংগ্রামী যোদ্ধার বীরত্বে গর্বিত উত্তরের প্রাচীনতম এই জনপদ। কালের বিবর্তনে সেই সাহসী সন্তানদের নাম যেন ইতিহাস থেকে মুছে না যায়, এজন্য শহীদদের নামে রংপুরের সড়কগুলোর নামকরণের দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হলে স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম পরিচয় জানানো প্রয়োজন। সমৃদ্ধ ইতিহাসের চর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে সড়কের নামকরণ শহীদদের নামে হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে সাহসী সংগ্রামী জীবিত ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামেও সড়ক হতে পারে। এর জন্য নগর অভিভাবকসহ প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলকে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানানো হয়েছে।

এদিকে সচতেন মহলের অনেকেই বলছেন, গত শতাব্দীর আশির দশকের রংপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ আফজাল শহীদদের নামে অনেকগুলো সড়কের নামকরণ ও ফলক লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ও প্রচারণার অভাবে নামকরণের সেই ফলক ও সাইনবোর্ডগুলো বিলীন হয়ে যায়। তবে এখনো নগরীর বিভিন্ন সড়কে দুই একটা সাইনবোর্ড এই সত্যতা ইঙ্গিত বহন করছে।

 শহীদদের নামে রংপুরের সড়কগুলোর নামকরণের দাবি তুলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ

এব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মুক্তিযোদ্ধাপুত্র তৌহিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম শহীদ রংপুরে। সেই শহীদ শিশু শংকু সমজদারের নামে নগরীর শাপলা চত্বর থেকে তাজহাট পর্যন্ত সড়কের নামকরণ হওয়া উচিত। এই সড়কেই শংকুর রক্ত ঝড়েছে।

তিনি বলেন, একসময় রংপুর শহরের অনেক সড়কের নাম শহীদদের নামকরণে হয়েছিল। কিন্তু নামকরণের পর সড়কগুলোর নাম ব্যবহার করতে আমাদের সচেতনতার অভাবে আজ সেই সব নাম হারিয়ে যেতে বসেছে।

আশির দশকের স্মৃতি তুলে ধরে কথা বলেন রিয়াদ আনোয়ার শুভ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাস চর্চা, গবেষণা ও লেখালেখির কাজ করছেন। এই লেখক বলেন, আমি নিজের চোখেই শাপলা চত্বরের (তৎকালীন তেঁতুলতলা) তিন কোনা পার্কটির শহরমুখী কোনায় শহীদ শংকু সরণির নামফলক দেখেছি। রংপুর পৌরসভার আশির দশকের দলিল অনুসারে শহরের বিভিন্ন সড়কের নাম মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের নামে হয়েছিল।

ইতিহাসের চর্চা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে সড়কের নামকরণ শহীদদের নামে হওয়া জরুরি

তিনি আরও জানান, রংপুর শহরের মূল সড়কের ডিসি বাংলো থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত অংশের নাম দুই ভাগে শহীদ জররেজ সরণি (ডিসি বাংলো থেকে রামমোহন ক্লাব) ও শহীদ মুখতার ইলাহির (রামমোহন ক্লাব থেকে শাপলা) নামে ছিল। এছাড়াও নগরীর বেতপট্টি সড়কটির (চৌরাস্তার ট্রাফিক আইল্যান্ড পর্যন্ত) নামকরণ করা হয়েছিল শহীদ ওমর আলী সরণি, সেন্ট্রাল  রোড শহীদ মোবারক সরণি, গোমস্তা পাড়া থেকে পাল পাড়ার দিকে যে রাস্তা চলে গেছে তার নাম শহীদ রনি রহমান সরণি। নগরীর দেওয়ান বাড়ি রোড হতে যে রাস্তাটি থানার পিছন দিয়ে মুলাটোলের দিকে চলে গেছে, সেই সড়কের নাম শহীদ অশ্বিনী কুমার ঘোষ সরণি। শহীদ ভিকু চৌধুরীর নামানুসারে হয় বেতপট্টি থেকে সেনপাড়ামুখী সড়কটির নাম।  স্টেশন রোড থেকে দরদী সিনেমা হলের বিপরীত দিয়ে আজিজ নগর কলোনির ভেতরের মূল সড়কটির নামকরণ করা হয় শহীদ চিকিৎসকের নামানুসারে শহীদ ডাঃ মর্তুজা সরণি। মুরগী ফার্ম খামার মোড় থেকে পীরপুর অভিমুখী সড়কের নামকরণ হয়েছিল শহীদ ইসমাইল হোসেন বসু মিয়া সরণি। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার নেতৃত্বদানকারী সংগ্রামী  শাহেদ আলীর নামে পীরজাবাদের সড়কের নামকরণ করা হয়েছিল।

সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজী মোঃ জুননুন বলেন, রংপুর শহরের অনেক সড়ক বিভিন্ন সময়ে নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নিজেদের দায়িত্বহীনতার কারণে সেই সরণিগুলো এখন নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা অপরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশে একেকটি নাম অনেক গুরুত্ববহ। অথচ এব্যাপারে কারো কোনো উদ্যোগ নেই।

এদিকে দৈনিক দাবানল সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বর্তমান সিটি মেয়র ও তার পরিষদ চাইলে আশির দশকের দলিল বের করে সড়কগুলোর নাম নিশ্চিত হয়ে পুনরায় সড়কের নামফলক ও ফলক লাগিয়ে দেয়া সম্ভব। এতে অন্তত আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে, চিনতে পারবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া রংপুরের বীর শহীদদের। পাশাপাশি শহীদদের নামের সড়কগুলোর নাম ব্যবহার ও প্রচার করতেও সকলকে সচেতন করতে হবে। তবেই পূর্ণতা পাবে নামকরণ স্বার্থকতা।

এ ব্যাপারে বার্তা২৪.কম-কে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বিভিন্ন এলাকার সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে আমরা সিটি করপোরেশনের সড়কগুলো শহীদদের নামে নামকরণ করে নামফলক স্থাপন করব। এজন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, এবার শুধু নামকরণ নয়, যাতে নামের ব্যবহার হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর