গল্পটা পুরনো। সংযোগ সড়কহীন সেতু। দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ভোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল ছয়টি গ্রামের বাসিন্দাদের সামনে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের মাত্র একটি নির্দেশেই রাতারাতি পাল্টে গেল সেই চিত্র।
অবশেষে সেতু পেল সংযোগ সড়ক। সেই সঙ্গে অবসান হলো প্রতীক্ষার। দীর্ঘ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেল কয়েক হাজার মানুষ। মাত্র একটি নির্দেশে দীর্ঘদিনের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা কৃতজ্ঞতা জানান প্রতিমন্ত্রীকে। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকে।
গ্রামবাসীর কৃতজ্ঞতার জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, তখন এ ধরনের অপরিকল্পিত প্রকল্প আর অনিয়ম যারা করেছেন, যারা এর পেছনে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা হবে।ময়মনসিংহের গৌরীপুরে লন্ডনী খালের ওপর নির্মিত সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় তা কোনো কাজেই আসছিল না স্থানীয়দের।
সেতু নির্মাণের পর গ্রামবাসী যতটা আনন্দিত হয়েছিলেন, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় ততটাই হতাশায় ডুবেছিলেন তারা।
পত্রিকায় জনদুর্ভোগের এ খবরটি নজরে এলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই গৌরীপুর যান ডা. এনামুর রহমান। অবশ্য প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই কাজ শুরু করায় তার পৌঁছানোর আগেই রাতারাতি তৈরি হয় সংযোগ সড়ক।
ডা. এনামুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, ছয় গ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পার হলেন। সংযোগ সড়ক হওয়ায় এখন সেতুটি তাদের কাজে আসবে।
তিনি আরো বলেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে সেই সভার পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করে গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহ এসেছি। এরপর সন্ধ্যার আগে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর চলে এসেছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কথা ক্লিয়ার, দেশ বদলে দিতেই হবে। যে কোনো মূল্যে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে হবে। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার- চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার। আসলে মন থেকে কোনো পরিবর্তন চাইলে যে সেটা সম্ভব, তার প্রমাণ এ সংযোগ সড়কটি।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি অর্থ ব্যয়ে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে দুই নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়নের বায়রাউড়া গ্রামে লন্ডনী খালের ওপর ৩২ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মিত হয়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নান্দাইলের মের্সাস নিলয় এন্টারপ্রাইজ ২৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯৫ টাকায় সেতুটি নির্মাণ করে।
প্রায় দেড় বছর আগে বায়রাউড়া ও দাড়িয়াপুর গ্রামের সংযোগস্থলে খালের ওপর নির্মিত সেতুটির দু’পাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় পাছারকান্দা, কোনাপাড়া, দারিয়াপুর, অচিন্তপুর বীরপুর গ্রামের বাসিন্দারা বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতেন। প্রায়ই সাঁকো পার হতে গিয়ে পা পিছলে পানিতে পড়ে বইখাতা ও জামা কাপড় নষ্ট হতো শিক্ষার্থীদের।
বায়রাউড়া গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা কল্পনাও করিনি, এভাবে মাত্র এক রাতের ব্যবধানে সংযোগ সড়ক পেয়ে যাব।
সেতু নির্মাণের পর দীর্ঘ দেড় বছরেও কেন এলাকার জনগণ সুফল পাননি- এ প্রশ্নের জবাবে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আসলে আমি বিষয়টি জানতামই না।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ আর স্থানীয়দের দ্বন্দ্বের কারণে এমনটা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, সংযোগ সড়কহীন সেতুর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। গৌরীপুর থেকে রাতেই আমরা নান্দাইলে যাব। সেখানেও এমন একটি সংযোগ সড়কহীন সেতু সরেজমিন পরিদর্শন করব। আমরা সবাইকে সর্তক করে দিয়েছি। বলেছি, কোনো অনিয়ম আর দুর্নীতি আর সহ্য করা হবে না।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-ময়মনসিংহ-৯ আসনের এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মোহসীন, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব মুশফিকুর রহমান ও সহকারী একান্ত সচিব ডা. শামীম আহমেদ।