আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিহতের ঘটনা বাড়ছে!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 15:34:37

ঢাকা: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। র‍্যাব পুলিশের অভিযানে গত ২ মাসে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩২৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। তবে উদ্বেগের বিষয়, চলমান বন্দুকযুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এসেও এ  নিহতের ঘটনা ঘটছে।

মানবাধিকার সংস্থার তথ্য বলছে, গত ১৫ বছরে র‌্যাব-পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে শুধু বন্দুকযুদ্ধেই নিহত হয়েছে ৮৫৫ জন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা ৫০ অতিক্রম করেছে। যা ২০০৫ সালের পর ৩য় সর্বোচ্চ এটি।

মানবাধিকারকর্মীরা মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারলেই কাঙ্ক্ষিত মাদকমুক্ত সমাজ পাওয়া সম্ভব। তবে আটককৃত ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলছে,  আটক ব্যক্তিরা কেন আর কিভাবে বন্দুকযুদ্ধে আক্রান্ত হন?

র‍্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ধর্ষ অপরাধীরা নিজেরাই নিজেদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠে। তাদের রক্ষা করতে চাইলেও রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তারা নিজেরাই নিজেদের তৈরি ফাঁদে পড়ে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)  তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের চলতি মাস পর্যন্ত কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোট নিহত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে র্যাব-পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন নিহত হয়েছে  ৮৫৫ জন। ২০০৫ সালে এমন ঘটনায় নিহত হয়েছিল সর্বোচ্চ ২৬০ জন। ২০০৬ সালে ১৯৬ জন এবং চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ জন।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হেফাজতে থাকাকালীন ঐ ব্যক্তির  আইনগত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই।

আসকের সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, র‌্যাব পুলিশের হেফাজতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মানে  ঠান্ডা মাথায় মানুষটাকে হত্যা করা।  কাজেই প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের হেফাজতে যাওয়ার পর কোনো আসামির বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এমন ঘটনা তখনই ঘটে যখন প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে অপরাধীকে চিনিয়ে নেওয়ার মত ঘটনা থাকে।

অন্যদিকে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষক সুব্রত ব্যাণার্জি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, মাঝে মাঝে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে, যেকোন মূল্যে নিজেকে মুক্ত দেখতে চায়।  সেক্ষেত্রে তার সহযোগীরা এমন আক্রমণ করতে পারে। তবে ঐ আক্রমণ থেকে নিজেদের পাশাপাশি আসামীকে রক্ষা করাও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব।

সর্বশেষ  বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) পুলিশের হেফাজতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বন্দুকযুদ্ধে নাজমুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, বুধবার (২৫ জুলাই) গভীর রাতে একটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি নাজমুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ মির্জাপুর থানায় নিয়ে আসছিল। পথে ভোররাতে মির্জাপুর বাইপাসের এলাকায় ওত পেতে থাকা নাজমুলের সহযোগীরা পুলিশের গাড়ির দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে  গুলি ছুড়ে। এ সুযোগে নাজমুল পুলিশের গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে পালানোর চেষ্টা করলে, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

এর ঘটনার ২ মাস আগে ২৯ মে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আনিসুর রহমান (৪০) নামে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তিনি মাদককারবারি ছিলেন। তবে নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম দাবি করেন, তার স্বামীকে আগের দিন বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর