বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পরিচালিত স্কুল ছাত্রছাত্রীদের বইপড়া কর্মসূচির আওতায় ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে খুলনা মহানগরীর ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৩৪১ জন শিক্ষার্থীকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই পড়ার জন্য গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় পুরস্কার দেয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) পিটিআই খুলনা প্রাঙ্গণে এই পুরস্কার বিতরণ উৎসব সম্পন্ন হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
খুলনা মহানগরীর ৪৩টি স্কুলের পুরস্কার বিজয়ী মোট ৩৩৪১ জন শিক্ষার্থীকে স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরাপাঠক পুরস্কার এই চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম পর্বে ১৮টি স্কুলের ১৬৩৯ জন শিক্ষার্থী ও দ্বিতীয় পর্বে ২৫টি স্কুলের ১৭০২ জন শিক্ষার্থী পুরস্কার পেয়েছে । তাদের মধ্যে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ১৮০৪ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ৯৭৮ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ৪৬২ জন এবং সেরাপাঠক পুরস্কার পেয়েছে ৯৭ জন। সেরাপাঠক পুরস্কার বিজয়ী ৯৭ জনের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ১০জনকে প্রদান করা হয় ২০০০ টাকা সমমূল্যের বইয়ের একটি করে বিশেষ পুরস্কার। এছাড়াও লটারির মাধ্যমে ৪ জন অভিভাবককেও একই ধরণের বিশেষ উপহার প্রদান করা হয়।
এই উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো. ফসিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর; ডা. আব্দুন নূর তুষার, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব; জনাব মো. হাবিবুল হক খান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা; জনাব মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, জেলা প্রশাসক, খুলনা, জনাব মেহেরুন নেছা, উপ-পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা, খুলনা অঞ্চল, খুলনা, জনাব খো. রুহুল আমীন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, খুলনা; জনাব ফারজানা রহমান, জেনারেল ম্যানেজার, সাসটেইনএবিলটি, গ্রামীণফোন লি.; জনাব স্বপন কুমার বিশ্বাস, সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই খুলনা ও জনাব হুমায়ুন কবির ববি, সাবেক খুলনা মহানগর সংগঠক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
শুরুতে ফুলের মালা কেটে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য পর্বে অতিরিক্ত সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের মুজিব বর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তোমরা খুবই সৌভাগ্যবান কারণ এখন তোমাদের বাবা-মা ও শিক্ষকরা বই পড়ার জন্য প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিচ্ছেন। আমাদের সময় এই বই পাওয়াটা এত সহজ ছিল না। এক্ষেত্রে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তোমাদের স্কুলে স্কুলে গিয়ে বই পৌঁছে দিচ্ছে। তোমরা বই পড়বে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০৪১ সালে জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ হবে তোমাদের হাত ধরেই। বইপড়ার এত সুন্দর কর্মসূচি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও গ্রামীণফোনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা কথা বলতে শিখি বাবা-মার কাছ থেকে, সেই কথাকে সুন্দর করে তোলেন বড় মানুষেরা, আর তারা হলেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতো বড় মানুষরা। সেরা মানুষ হতে হলে বাবা-মা, শিক্ষকদের শিক্ষার পাশাপাশি অবশ্যই এইসব বড় মানুষদের বই পড়তে হবে। তবেই আমাদের দেশ উপকৃত হয়। আগামী দিনে তোমাদের দিয়েই দেশ উপকৃত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুল হক খান বক্তব্য শুরুতেই পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন তোমরা অবসর সময়ে হাতে মোবাইল না রেখে একটি বই রাখবে। যখনই সুযোগ পাবে বইটি পড়বে। এতে তোমাদের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা হবে, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম বাড়বে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন উন্নত দেশ গঠনে আলোকিত মানুষের বিকল্প নাই। আর আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য বেশি বেশি বই পড়তে হবে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
গ্রামীণফোনের জেনারেল ম্যানেজার, সাসটেইনেবিলটি ফারজানা রহমান বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কার্যক্রমের সাথে গ্রামীণফোন যুক্ত থাকতে পেরে গর্বিত। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন সবার জন্যে চমৎকার সব বইয়ের একটি ই-লাইব্রেরি তৈরি করেছে গ্রামীণফোন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যৌথ উদ্যোগে। আগ্রহী পাঠকগণ পছন্দের বই পড়তে পারবেন ই-লাইব্রেরি www.alorpathshala.org ঠিকানায়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে খুলনা মহানগরীর সাবেক সংগঠক হুমায়ুন কবির ববি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বই মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সহায়তা করে। বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে জীবনে সার্বিক উন্নয়ন অনেকটাই সহজতর হয় সেজন্য তিনি বেশি বেশি বই পড়তে শিক্ষার্থীদের আহবান জানান। তিনি আরও বলেন সরকারের ঘোষিত মুজিব বর্ষে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং মুজিব বর্ষ সফল হবে। তিনি উৎসব আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
মোমবাতি প্রজ্বলন ও আগুনের পরশ মণি ছোঁয়াও প্রাণে .. গানের সুরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন।