রাজশাহীতে প্রচারণায় এগিয়ে আ.লীগ, ব্যালটে নিরব বিপ্লবের আশায় বিএনপি

রাজশাহী, জাতীয়

  জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-26 02:45:14

রাজশাহী থেকে: রাজশাহী নগরীর অলি গলি থেকে মহল্লার চায়ের দোকান সর্বত্রই এখন সরব শেষ মূহুর্তের প্রচারণায়। শনিবার (২৮ জুলাই) রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে সব ধরনের প্রচারণা।

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি, কখনও রোদ বৃষ্টির খেলা বা ঝিমঝিম শব্দে অঝোর ধারার বৃষ্টি। কোন কিছুতেই থেমে থাকছে না শেষ মূহুর্তের এই প্রচারণা।

ট্রেন থেকে রাজশাহী রেল স্টেশনে নামা মাত্রই প্রচারণার মাত্রাটা নজর কাড়ে। টিকেট কাউন্টারের গোটা চত্বর জুড়ে ঝুলছে সারি সারি পোস্টার। সবগুলোই নৌকা প্রতীকের।

স্টেশন থেকে বের হতেই ভিন্ন এক নগরী। মনে হবে নির্বাচনী উৎসব। নগরীর আনাচে কানাচে বিল বোর্ড,পোস্টার,মাইকিং। রয়েছে পথে পথে গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি মুখে উন্নয়ন আর আশ্বাসের বর্ণনা দেয়া দলবদ্ধ লোক সঙ্গীতের আসর।

তবে সব প্রচারণাই যেন ঢেকে পড়েছে নৌকা প্রতীকের আড়ালে। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

এ মাথা থেকে সে মাথা। ৯৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই নগরীতে ধানের শীষ প্রতীকের ব্যানার,ফেস্টুন বা বিল বোর্ড খুঁজে পেতে চোখকে বেশ কষ্টই দিতে হয়!

সে তুলনায় কাঁঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (নাজিউর) হাবিবুর রহমান,হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র হিসেবে গণসংহতি আন্দোলনের মুরাদ মোর্শেদের হাতি প্রতীকের প্রচারণাও বেশ।

এতো গেলো বৃষ্টিভেজা নগরীর অলিগলির কথা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও সরব প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও যেন দখল করে নিয়েছে নৌকা। সব বিবেচনায় প্রচারণায় নৌকা যে এগিয়ে আছে সেটা মানতে দ্বিধা নেই কারো। নির্বাচনী পরিবেশে  নৌকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ধানের শীষের প্রচারণায় পিছিয়ে থাকার জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে নানা গুজবে।

"বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়কে বিমান থেকে নামিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া, গয়েশ্বর রায়কে সি-অফ করতে যাওয়া বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুসহ ১০ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে বিমানবন্দর থানায় নেয়া,বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল যুবলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত" ছবি কারসাজির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এমন অসংখ্য গুজব ছড়িয়ে শান্ত নগরীকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করার বিস্তর নমুনা চোখে পড়ে ফেসবুক টুইটার বা ইনস্ট্রাগ্রামে।

আচানক পরিকল্পিতভাবে এসব গুজব ছড়ানোর বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা,নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে বার বার সতর্ক করা হলেও কাটেনি গুজবের রেশ।

ফেসবুকে বিএনপি সমর্থক বাবু নামের একটি আইডি থেকে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পায়ে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত একটি ছবি প্রকাশিত হয়।সেখানে ফটোশপের মাধ্যমে কারসাজি করে গুলিবিদ্ধ বুলবুলের পা থেকে রক্ত ঝরার ছবিও জুড়ে দেয়া হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা কথিত গুলিবিদ্ধ বুলবুলের ছবির নিচে ক্যাপশনে লেখা হয়, বুলবুলের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি হামলার নিন্দাটাও জানানো হয় ওই পোস্টে

যোগাযোগ করা হলে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন,কারা,কেন এসব গুজব রটাচ্ছে তা আমার জানা নেই।

তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, প্রচারণায় টিকে থাকতে না পেরে অপ-প্রচারণার মাধ্যমে পরিকল্পিত গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত বিএনপি। এটা তাদের এক ধরনের কৌশল। পুরনো খেলা।

রাজশাহীতে ভোটকেন্দ্রে ১৩৮টি। তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ ভোটারের দিকে তাকিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১শ'৬০ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রার্থী ।

যে আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি গুছিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন।তাদের সহায়তায় থাকছে ১৪শ' পুলিশ, ১৯শ'৩২ আনসার ও ৪শ'৫০ জন র‌্যাব সদস্য ছাড়াও ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্যে ৩০ জন নির্বাহী ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

এর মধ্যে শনিবার সকাল থেকে টহলে নেমেছে ১৫ প্লাটুন।রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে ৪ প্লাটুন বিজিবি।আগের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন

২০১৩ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশনে নির্দলীয় নির্বাচনে হেরেছিলেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে।

৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে সেই হার রাজশাহী মতো দূর্গে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে।

অন্যদিকে প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও বিএনপির প্রত্যাশা ভোটে "নিরব বিপ্লবের"। তবে গতবারের সেই ধাক্কা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ আগের চাইতে আরো বেশী আত্নবিশ্বাসী। এবার চ্যালেঞ্জও কম নয়। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন।

নগরীর মানুষের রায় নিজেদের পক্ষে নেবার বিষয়েও আশাবাদী আওয়ামী লীগ। তবে ভোটের সেই ব্যবধান কাটিয়ে মেয়র পদে নগর পিতা হবেন রাজশাহী মহানগরীর?

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য এবং জাতীয় নেতা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন  নাকি মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল?

আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে এই  প্রশ্নের জবাব দেবেন আম আর সিল্কের নগরী রাজশাহী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর