মুজিব বর্ষে বেরোবির 'স্বাধীনতা স্মারক' নির্মাণ সম্পন্নের দাবি

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-30 05:52:31

মুজিব বর্ষকে ঘিরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সম্বলিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘স্বাধীনতা স্বারক’ এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবি উঠেছে। অসম্পন্ন অবস্থায় কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে থাকা স্বাধীনতা স্মারকটির প্রত্যাশানুযায়ী ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তারা মনে করছেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে অসম্পন্ন ‘স্বাধীনতা স্মারক’ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শহীদের আত্মত্যাগকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। মর্যাদা হারাচ্ছে শহীদের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত স্বাধীনতা স্মারকটি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বাজেট ঘাটতির অভাবে থমকে আছে সাত বছর আগে নির্মাণ শুরু হওয়া স্বাধীনতা স্মারকের অসম্পন্ন কাজগুলো। নকশানুযায়ী নির্মাণ সম্পন্ন করতে এখন প্রয়োজন বাজেট অনুমোদন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং ফটকের দক্ষিণ পার্শ্বে নির্মাণ অসম্পন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্মারকটি। ১১ হাজার ৬৯৬ বর্গফুট আয়তনের বেদির উপর তিনটি স্তম্ভ দ্বারা তৈরি হয়েছে স্মারকটি। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ স্তম্ভের উচ্চতা ৫৫ ফুট। দ্বিতীয়টির ৩৫ ও তৃতীয়টির উচ্চতা ২৫ ফুট।

নকশানুযায়ী বেরোবির স্বাধীনতা স্মারক

নকশানুযায়ী এখনো স্বাধীনতা স্মারকের দুই দিকেই মাটি ভরাটের কাজ বাকি। মেঝেতে বসানো হয়নি মার্বেল পাথর। ভাস্কর্যে স্তম্ভের গায়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিসহ পোড়ামাটি দিয়ে কারুকার্যের কাজও সম্পন্ন হয়নি। তিন স্তম্ভের পেছনের দেয়ালের গায়ে নেই টাইলস ম্যুরাল।

২০১৩ সালের নভেম্বরে নির্মাণ শুরু হওয়া স্বাধীনতা স্মারকটি নির্মাণে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার ভাস্কর্য চত্বর ঘিরে বেড়েছে অসামাজিক কার্যকলাপ। প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্বাধীনতা স্মারকের পাদদেশে থাকছে বহিরাগতদের আনাগোনা। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। দিনের বেলায় বসে গ্রুপ স্টাডি আর প্রেমিক যুগলদের মিলন মেলা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশের ভাস্কর্য ঘিরে এমন অস্বস্তিকর পরিবেশে ক্ষুব্ধ সচেতন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী পোমেল বড়ুয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ এই স্বাধীনতা স্মারক। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এটি নির্মাণ অসম্পন্ন অবস্থায় আছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে দ্রুত এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য দাবি জানিয়েছি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিদ হাসান বলেন, কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে জাতীয় দিবসগুলোতে আমরা প্রত্যাশানুযায়ী স্মারকটি ব্যবহার করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাতে অসম্পন্ন ‘স্বাধীনতা স্মারক’ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শহীদের আত্মত্যাগকে ছোট করার কোনো মানে হয় না। আমরা চাই মুজিব বর্ষে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হোক।

সন্ধ্যায় স্বাধীনতা স্মারকের পাদদেশে থাকছে বহিরাগতদের আনাগোনা

নির্মাণ কাজের ধীরগতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী কমলেশ চন্দ্র সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বারকটি নির্মাণে শুধু অবকাঠামোর জন্য টেন্ডার করা হয়েছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ঠিকাদার ১ কোটি ৬ লাখ টাকা দর বাজেটে স্মারকটির অবকাঠামোগত কাজ শেষ করেছেন। এখন নকশানুযায়ী ফিনিশিংসহ বাকি কাজ সম্পন্ন করতে নতুন বাজেটের প্রয়োজন।

অন্যদিকে মুজিব বর্ষে স্মারকটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র ও জনসংযোগ দফতরের সহকারী প্রশাসক তাবিউর রহমান প্রধান। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতির অভাবে বহুদিন স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে মুজিব বর্ষ ঘিরে আমরা দ্রুত নতুন বাজেট নিয়ে স্মারকের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আশা করছি মুজিব বর্ষেই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ আব্দুল জলিল মিয়াকে জনতা ব্যাংক অর্থ প্রদান করে। পরের বছর ২৮ নভেম্বর বিশিষ্ট স্থপতি মুনাওয়ার হাবীব তুহিনের নকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম ‘স্বাধীনতা স্বারক’ ভাস্কর্যটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী। ধীরগতিতে কিছু কাজ হওয়ার পর থমকে যায় এর নির্মাণ। ২০১৬ সালে প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ্ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আবারও শুরু হয় স্মারক নির্মাণের কাজ। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি স্থাপনাটির কাজ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর