রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে অজ্ঞাত পরিচয়ে অনেক রোগী আসে। কেউ তাদের খোঁজও নেয় না। ওইসব রোগীরা অবহেলায় পড়ে থাকে হাসপাতালের এক কোণে। তাদের কাছে কেউ না গেলেও ছুটে যান আলেয়া। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আলেয়ার শুশ্রূষায় সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন অনেকেই। তাতেই আলেয়ার সুখ।
আলেয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরে রামেক হাসপাতালে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছেন। অল্প বেতনে কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই তার কাছে সুখের। এ পর্যন্ত ১৫০ জনের বেশি অজ্ঞাত রোগীকে সেবা করে সুস্থ করেছেন তিনি।
মহৎ এই কাজে কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। তাতেও কোনো কষ্ট নেই আলেয়ার। নীরবেই দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তবে দেরিতে হলেও মানবসেবায় সদা তৎপর মানুষটিকে ঠিকই চিনতে পেরেছে ‘রাঁধুনী’। তাই রাঁধুনী ‘কৃর্তিময়ী হিতৈষী নারী’র সম্মাননা তুলে দিয়েছেন আলেয়ার হাতে।
গেল শনিবার (৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলেয়া বেগমকে সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। সম্মাননা তুলে দেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারপারসন আইনজীবী ফৌজিয়া করিম, প্রযুক্তিসেবা প্রতিষ্ঠান গিগা টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিরা জুবেরী এবং স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল ইসলাম।
পুরষ্কার পাওয়া অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আলেয়া। এমন নারীকে সম্মাননা দিয়ে উপস্থিত অতিথিরাও দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। পুরষ্কার পেয়ে সোমবার (৯ মার্চ) রাজশাহীতে ফিরেছেন তিনি।
আলেয়ার সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে অস্থায়ী চাকরি নেওয়ার পর বিগত বছরগুলোতে তিনি ১৫০ জনেরও বেশি অজ্ঞাত রোগীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি তিনি নিঃস্বার্থ সেবা হিসেবেই নিয়েছেন।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সম্মাননা আমার অনেক বড় পাওয়া। ভবিষ্যতে আমার কাজের স্পৃহা আরো বাড়িয়ে দেবে।’
আলেয়ার বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরের খাজা গ্রামে। হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আলেয়ার সঙ্গে স্বামীর বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের কয়েক বছর পরই ২০০৩ সালে রাজশাহী শহরে চলে আসেন তিনি। সঙ্গে করে নিয়ে আসেন একমাত্র মেয়ে টুম্পাকে। নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় বস্তির ভেতরে স্বল্প ভাড়ার বাড়িতে ওঠেন তিনি।
প্রথম দিকে পুরনো বই বাঁধাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন। হাসপাতালের ডেইলি লেবার হিসেবে শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদারের মাধ্যমে আয়ার কাজ পান আলেয়া। এরপর থেকে মাসে ১৫০০ টাকা বেতনে ওই চাকরির পাশাপাশি অজ্ঞাত রোগীদের সেবা-যত্ন করে চলেছেন তিনি।