সুর নেই কাটাসুর খালের

ঢাকা, জাতীয়

আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 12:17:05

চারদিকে নদী বেষ্টিত রাজধানী ঢাকার এক সময়ের ঐতিহ্য ছিল খাল। শহরের বিভিন্ন জায়গায় জালের মত ছড়িয়ে ছিলো ৫০টিরও বেশি খাল। যেগুলো মিশে ছিলো নদীতে। বৃষ্টি হলেই শহরের পানি গিয়ে পড়ত খালে, আর খাল দিয়ে পানি বেয়ে চলে যেত নদীতে। সেই সাথে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যেত ময়লা আবর্জনা।

দিনের পরিক্রমায় ভরাট, দখল আর দূষণে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে এসব খাল। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলোও দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। রাজধানীর খাল নিয়ে বার্তা২৪.কমের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে কাটাসুর খাল।

কাটাসুর খালের শুরু রায়ের বাজার বটতলা থেকে। কাটাসুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়াই খালের নাম হয়েছে কাটাসুর খাল। জাফরাবাদ, সুলতানগঞ্জ, কাদেরাবাদ হাউজিং থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে রামচন্দ্র খালের সঙ্গে মিশেছে এটি। তারপর বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে মিশেছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের দেয়া তথ্য মতে এই খালের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গড়ে প্রায় (৮৮০০X৬২) ফুট।

রায়ের বাজার, মোহাম্মদপুর এলাকার পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে কাটাসুর খাল। তবে তার সেই সুর আর নেই। দখল, ভরাট আর দূষণে ভোতা হয়ে গেছে কাটাসুর খাল।

এ এলাকায় আগে নদী ছিল। নৌকা, লঞ্চ চলাচল করেছে। ধীরে ধীরে ভরাট করে ঘর-বাড়ি বানানো হয়েছে, নানা স্থাপনা বানানো হয়েছে। আর তাই এখন মানুষের ময়লা ফেলার জায়গা হয়েছে এই খাল। খালের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই খাল শেষ হয়ে গেছে। কথাগুলো আক্ষেপের সুরে বলছিলেন দুলাল।

বটতলা খালপাড়ে দাঁড়িয়ে কথা হয় দুলালের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, গতবছর একবার ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছিলো। তারপর কিছুদিন মোটামুটি খাল ভালো ছিল। ধীরে ধীরে আবার ময়লা জমে ভরাট হয়ে গেছে, তবে আর পরিষ্কার করার খবর নেই।

সরজমিন দেখা যায়, দূষণ জর্জরিত খালটি। খালে ফেলা হয়েছে পাটের ও প্লাস্টিকের বস্তা, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, বাঁশের তৈরি ঝুড়ি, গাড়ির টায়ার, বিরিয়ানির প্যাকেট, পানির জারসহ আশপাশে বাসাবাড়ির ব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট ময়লা। খালের পানির উপরে এখন স্তরের পর স্তর ময়লা। আর তাতে জন্ম নিয়েছে নানা ধরণের আগাছা। কোথাও কোথাও এসব আগাছা খালের অংশ ছেড়ে পাড়ে উঠে এসেছে। খালের উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছে সরকার দলীয় দলের অঙ্গসংগঠনের কার্যালয়।

এছাড়াও দেখা যায়, খাল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পানির ছোট পাইপ। ওয়াসার পানির লাইন থেকে ছোট ছোট প্লাস্টিকের পাইপে বাসা বাড়িতে পানির লাইন দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী জানান মাঝে মাঝে পাইপ ফেটে ওয়াসার পানির সাথে খালের বিষাক্ত পানি মিশে যায়।

জয়নুল আবেদিন ১০ বছর ধরে দোকান করছেন খাল পাড়ে। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, এসব পানির পাইপ ফেটে বাসা বাড়িতে খালের পানি চলে যায়। এতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাসা বাড়ির পানির পাইপ ফেটে যাচ্ছে। যাদের বাড়ির পাইপ ফেটে যায় তারা মিস্ত্রী এনে ঠিক করে নেয়। আজকেও পাইপ ফেটে যাওয়ার কারণে ৫ থেকে ৬ বাড়ির পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এমন চিত্র প্রায় প্রতিদিনেরই।

দুর্গন্ধের মধ্যে দোকান করতে সমস্যা হয় না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন নতুন দোকান দেয়ার সময় সমস্যা হত। এখন থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে মশা মাছির উৎপাত বেশি।

রিশাদ দেওয়ান নামের একজন বার্তা২৪.কমকে জানান, খালের আশেপাশে যারা আছেন তারা বেশি সচেতন না। তারাই খালে ময়লা ফেলেন। ধীরের ধীরে ময়লা জমে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্বল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। খাল পরিষ্কার থাকলে দেখা যেত বৃষ্টির সাথে সাথে পানি নেমে যেত।

এর আগে একবার খাল উদ্ধার করা হয়। তারপর আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ খুব জরুরী। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেই সাথে মানুষের সচেতনটা দরকার। অধিকাংশ খাল একটির সঙ্গে আরেকটি সংযোগ রয়েছে। এসব খাল বহমান ও পরিষ্কার থাকলে খাল দিয়ে যাতায়াতও করা সম্ভব হতো বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন: বর্জ্যে ভরা হাজারীবাগ খাল

এ সম্পর্কিত আরও খবর