মধ্যরাতে সাংবাদিককে মোবাইল কোর্টে দণ্ড বেআইনি: টিআইবি

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 20:10:29

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ঘর থেকে তুলে আনার পর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়ার পুরো ঘটনাকেই বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শনিবার (১৪ মার্চ) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি দাবি করেছে, আইনের এমন যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ আইনের শাসনের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের পরিপন্থি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর নামান্তর।

এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় দ্রুত তদন্ত এবং জড়িতদের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে প্রশাসন তথা সরকারের ওপরই জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে বলেও মন্তব্য করে টিআইবি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের সূত্র ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী রাতের বেলা কোনো নাগরিককে ঘর থেকে তুলে এনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অবৈধ। যে সাংবাদিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তিনি যদি সন্দেহের তালিকায় থাকতেন, তাহলে তাকে নজরদারিতে রাখা যেত কিংবা অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ অভিযান চালাতে পারত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরও গুরুতর মনে হলে ম্যাজিস্ট্রেট তার বাসা সিলগালা করে দিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মধ্যরাতে দরজা ভেঙে একজন নাগরিককে তুলে আনা এবং পরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়াটা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা যতটুকু বুঝি, তাতে মোবাইল কোর্টের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা, কিন্তু তা না করে ওই সাংবাদিককে তুলে আনার পর কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা থেকে পুরো ঘটনাটির পেছনেই যে অপরাধ দমন নয় বরং অন্য কোনো বিবেচনা কাজ করেছে তা স্পষ্ট।’

ড. জামান বলেন, ‘এরই মধ্যে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, তার স্বামীকে আটক করার পর নগ্ন করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এই অভিযোগের সত্যতা থাকলে, তা কেবল আইনের অপব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং যে বা যারা এই ঘটনায় জড়িত তারা সরাসররি ফৌজদারি অপরাধ করেছে। সুতরাং আমরা দাবি করছি যে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দ্রুত একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন দেবেন, এবং এমন জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হবে যার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, আরিফুল ইসলাম জেলাপ্রশাসক ও তার নেতৃত্বে জেলাপ্রশাসনের নানা স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন করে আসছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করার জন্যই যদি তাকে এমন বেআইনিভাবে তুলে এনে বিচার করা হয়ে থাকে, তবে সেটা দেশের জন্য এক অশনি সংকেত। কারণ সেক্ষেত্রে এই পুরো ঘটনাপ্রবাহকে বিবেচনা করতে হবে গণমাধ্যমের জন্য একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে, যার সরাসরি অর্থ দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করা যাবে না। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকার করেছেন, সেখানে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার এহেন আচরণ গুরুতর অসদাচারণ এবং সরকারকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার শামিল।’

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত এই অভিযোগের সুরাহা করে, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগতব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর