আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে বন্দর নগরীতে। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক বা অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও তাদের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুসারী এবং সমর্থকরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরুর পর ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড এবং ২৮ নম্বর দক্ষিণ পাঠানটুলী ওয়ার্ডে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সরকারি দল সমর্থিত ও সমর্থন বঞ্চিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত শনিবার (১৪ মার্চ) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ হাসান মুরাদ ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসান মুরাদ ও তার ছেলেসহ মোট ছয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে, গত ১৩ মার্চ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে নগরীর সদরঘাট বাংলাবাজার এলাকায় ২৮ নম্বর দক্ষিণ পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদেরের সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় ২৮ নম্বর দক্ষিণ পাঠানটুলী ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি বাবুল দাশ তনয় মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এছাড়া, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা, নগর ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ২৮ নম্বর দক্ষিণ পাঠানটুলী ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আব্দুল গণি রিপনসহ পাঁচজন আহত হন। হামলার জন্য সরকারি দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থকদের দায়ী করা হয়।
নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তবে, যে কোনো ধরনের নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছেন তারা। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডকে অপেক্ষাকৃত সংঘাতপ্রবণ হিসেবে বিবেচনায় রেখে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশন থেকে এরই মধ্যে সিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে। নির্বাচনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার যাতে কেউ করতে না পারেন, সে ব্যাপারেও সময়মত পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রো পলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছোটখাট যেসব সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ক্ষেত্রে পুলিশ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা বৈধ অস্ত্রধারীদের গতিবিধির ওপরও নজর রাখছি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে দল সমর্থিত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা রয়েছেন, তাদের পূর্বের রেকর্ডপত্র আমরা যাচাই করে দেখছি। পাশাপাশি তালিকা ধরে অবৈধ অস্ত্রধারী বা সন্ত্রাসীদের কে কোথায় অবস্থান করছেন বা এলাকায় কেউ চলাফেরা করছেন কিনা, সেসব খোঁজ রাখছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসার বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্বাচনের আগে নির্ধারিত সময়ে আমরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা নেয়ার নির্দেশনা প্রচার করব। নির্বাচন শেষে সেগুলো পুনরায় থানা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন লাইসেন্সধারীরা। কিন্তু সাত থেকে আটটি ওয়ার্ড চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলো সংঘাতপ্রবণ এলাকা। এসব ওয়ার্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
তবে, ভোটগ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সাধারণ ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে চসিক নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৬১ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ১০৭ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। মূলত এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর অনুসারী ও সমর্থকরাই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।