স্কুটি দুর্ঘটনায় নিহত দুই নারীর পেশা এখনো রহস্য ঘেরা!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 01:40:39

রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় মধ্যরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই নারীর পরিচয় পাওয়া গেলেও এখনও তাদের পেশা নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের স্কুটিতে যে প্রেস লেখা ছিল এবং পার্ল ইন্টারন্যাশনালের আইডি কার্ড পাওয়া গিয়েছিল তা ভুয়া। তাহলে কী ছিল তাদের সঠিক পেশা আর কেনই বা ওই দিন মধ্যরাতে বের হয়ে হয়েছিলেন তা জানা যায়নি। সে তদন্ত এখনো চলছে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত তাদের সঠিক পেশা সম্পর্কে জানতে পারিনি। এমনকি নিহত ওই দুই নারী সৈয়দা কচি ও সোনিয়া আক্তার কী কাজ করতেন তা তার পরিবারও জানত না। যেহেতু তাদের কাছে প্রেসেরসহ দুইটি ভুয়া আইডি কার্ড পাওয়া গেছে, তাই তদন্তে তাদের পেশার ওপর আমরা জোর দেই।

প্রাথমিকভাবে, আমরা ধারণা করছি অসামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এমন কিছু তথ্য আমরা পেরেছি। তদন্ত সেদিকেই চলছে। তবে সেটাও যে শতভাগ নিশ্চিত তাও নয়।

তদন্তকারি কর্মকর্তা আফজাল আরও বলেন, ওই দিন রাতে তারা উত্তরার দিক থেকে এসেছিলেন। আমরা সেতু ভবনের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেখানে তাদের কোন কিছু পাওয়া যায়নি। কারণ ওই দিন ক্যামেরাগুলো বন্ধ ছিল। পরে মূল সড়ক ধরে একাধিক ফুটেজ সংগ্রহ করে তাদের খুঁজে পাই। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যেটা মনে হয়েছে এটা নিতান্তই একটা দুর্ঘটনা ছিল।

দুর্ঘটনাস্থলে আমরা সোনিয়ার মোবাইল ফোন পাই, মোবাইলের কল লিস্ট বিশ্লেষণ করতে থাকি। অধিকাংশ ফোন এসেছে বা করা হয়েছে মিরপুর আর কল্যাণপুর থেকে। দুইটা অনাকাঙ্ক্ষিত নম্বর পেয়েছি। তারা কিছু তথ্য আমাদের দিয়েছেন। সে তথ্যগুলো কতটুকু সত্য তা যাচাই বাছাই চলছে। ভোলা সদর উপজেলার মাছভেদুরিয়া গ্রাম থেকে সোনিয়ার মা মর্গে এসেছিলেন। তার কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় মোবাইল ফোনটিও তার হাতে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের পালটিলার কচির মরদেহ বুঝে দেওয়া হয়েছে তার মামার কাছে। কেননা তার বাবা-মা কেউ নেই। তার মামা নুরুল আমিন ভূঁইয়া পুলিশকে জানান, কচি উত্তরায় পার্ল ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। কল্যাণপুরের একটি বাসায় এক রুমে ভাড়া থাকতেন তিনি। নিজের স্কুটারে চলাফেরা করতেন। আমরা তদন্তের স্বার্থে তার সঙ্গেও একাধিক বার কথা বলেছি। কিন্তু পার্ল ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রায় ১ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেন কচি। আর সোনিয়াও সাংবাদিক না। 

এসআই আফজাল হোসেন বলেন, তারা দুইজন খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। সব সময় একজন অন্য জনের সঙ্গে চলাফেরা করতেন ওই স্কুটি দিয়ে। স্কুটির মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপারে কাজ করা হচ্ছে। বিআরটিএ-তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রো-হ-২৪-৪২৮৩ নম্বরের বাহনটি রানার অটোমোবাইল কোম্পানির নামেই রেজিস্ট্রেশন করা ছিল। সব কিছুর তদন্ত চলছে। শেষ হলেই সব পরিষ্কার হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাথমিক আলামত দেখে ভারি যানবাহন স্কুটিকে ধাক্কা দেওয়ায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে। আর তাদের পেশা, চলাফেরা নিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে একটার দিকে মহাখালী সেতু ভবনের সামনের সড়কে দুই নারীকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় পথচারীরা। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে দুজনকেই মৃত ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর