স্বার্থের দ্বন্দ্বে জিম্মি পরিবহন খাত: টিআইবি

জেলা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 07:43:35

ঢাকা: একদিকে পরিবহন মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্ব ও অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল অবস্থানের একাকার হওয়ার ফলে  স্বার্থের দ্বন্দ্বের হাতে দেশের পরিবহন খাত জিম্মি বলে দাবি করছে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

সংস্থাটির দাবি এ এই সুযোগে মুনাফালোভী একশ্রেণির মালিকপক্ষ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন পরিচালনার মাধ্যমে পরিবহন খাতে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ লক্ষ্যে অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে এ খাতে দীর্ঘকাল যাবৎ বিদ্যমান স্বার্থের দ্বন্দ্বের অবসানের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করারও দাবি জানায় সংস্থাটি। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনায় নাগরিকদের জীবন ও সম্পদহানির প্রেক্ষিতে এই দাবি জানায় টিআইবি।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সংশ্লিষ্টজনদের চূড়ান্ত গাফিলতি, আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়া, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসনের অভাব, উচ্চপর্যায়ের সিন্ডিকেটসহ নানাবিধ জটিলতা ও অনিয়মের বেড়াজালে বন্দী সড়ক পরিবহন খাত। মুনাফালোভী একশ্রেণির মালিকপক্ষ অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে ফিটনেসবিহীন যানবাহন পরিচালনার মাধ্যমে পরিবহন খাতে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এতে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ-সহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষ এই অরাজকতার দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না।

২০০৯ সালে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার ওপর পরিচালিত টিআইবি’র এক গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বললেও কার্যত গত ১০ বছরেও মোটরযান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিআরটিএ কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করেনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বিআরটিএসহ গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহ ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটিসহ সারাদেশে বিভিন্ন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের দৌরাত্মের কাছে জিম্মি। পাশাপাশি যখন রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিবিশেষ এধরণের সংগঠনসমূহ ও তার সদস্যদের অপরাধ ধামাচাপা দিতে তৎপর হন তখন পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সুশাসনের ঘাটতি এবং মাঠ পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের অভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাতেও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ।”

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। যেখানে গাড়ি নিবন্ধন, রুট পারমিট সংগ্রহ ও সড়কে গাড়ি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে ঘুষ ও চাঁদা লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে অদক্ষ চালকদের পরীক্ষা ছাড়াই লাইসেন্স সংগ্রহের তথ্যও পাওয়া যায়। এর প্রেক্ষিতে টিআইবি প্রদত্ত কোন কোন সুপারিশ আমলে নিয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও একদিকে কার্যকর প্রয়োগের অভাব ও অন্যদিকে স্বার্থের দ্বন্দ্বের হাতে অব্যাহত জিম্মি অবস্থার সুযোগে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দৌরাত্মে এখাতে অরাজক পরিস্থিতি ও দুর্ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর