তিস্তা পাড়ে করোনার চেয়েও নদী ভাঙনে বেশি আতঙ্ক

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-25 20:55:29

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বৈশ্বিক এ মহামারির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশও। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ জন। নিরাপদ সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টাইন) আছেন কয়েক হাজার মানুষ।

এখন শহর-গ্রাম সবখানেই বিরাজ করছে করোনা আতঙ্ক। মানুষের মন কাঁদছে করোনা ভীতিতে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সতর্কতা আর সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রংপুরে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের কাছে করোনার চেয়েও বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নদী ভাঙন।

তিস্তা নদীর রংপুর অংশের গঙ্গাচড়াতে নদী ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে লোহানী ইউনিয়ন অনেকের বাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ফোটামারিতে নদী গর্ভে গেছে বাঁধ। এছাড়াও ছালাপাক, চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হারিয়ে যেতে বসেছে নদীর বুকে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের সাতটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। স্থানীয়ভাবে এখানকার সাধারণ মানুষজন নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা করেও সুফল পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় নদী ভাঙন থেকে স্থায়ী সমাধান চান ভাঙন কবলিতরা।

তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, ছবি: বার্তা২৪.কম

ফোটামারি এলাকার পঁচাত্তর বছর বয়সী তফিজ উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়্যা হামার চিন্তা নাই। যত চিন্তা নদী ভাঙা নিয়্যা। কয়দিন আগোত হামার তিনকোনা ঘরের দু’কোনা নদীর পাড় ভাঙি তলে গেইছে। এ্যালা বেট্যা-বেটিক নিয়্যা খুব কষ্টে আচু।তফিজ উদ্দিনের মতো এ এলাকার ২শ’ পরিবার এখন নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তাদের দাবি, তিস্তার বাম তীরে সাত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হলে এসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে। বন্যা মৌসুমের আগেই দ্রুত বাঁধ নির্মাণসহ নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন তারা।

নোহালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়্যারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ টিটুল বার্তা২৪.কমকে জানান, এখানকার মানুষদের সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম নদী ভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাজ না হওয়ায় হতদরিদ্র মানুষগুলো দিন দিন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।

ভাঙনের কবলে লোকালয়, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওই এলাকার ৩শ’ মিটার বাঁধ রক্ষায় এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। খুব শিগগিরই ভাঙন রোধে বাঁধের কাজ শুরু হবে। এছাড়া তিস্তার ভাঙন রোধে বেশ কয়েকটি স্থানে বালুর বস্তা, কংক্রিটের ব্লক ফেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, গঙ্গাচড়ার শংকরদহ গুচ্ছ গ্রাম, কাশিয়ানির চর, ইছলিসহ নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক হেক্টর আবাদি জমি তিস্তার গর্ভে হারিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক ভাঙনের ফলে তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর