করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও সচেতনতা সৃষ্টিতে রংপুরে সব ধরনের বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু নগরীতে থেমে নেই লোকসমাগম। সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক-বীমা, রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিশেষ করে জনসমাগম স্থলগুলোর অন্যতম একটি আদালত প্রাঙ্গণ। আইনি সেবা প্রত্যাশী হাজারো মানুষের ভিড় এখানকার প্রতিদিনের চিত্র। তবে করোনাভাইরাস আতঙ্কে সচেতন মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কমলেও আদালত চত্বরে বন্ধ হয়নি মানুষের হিড়িক। এতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণে আক্রান্তের ঝুঁকি।
সচেতন মহলের দাবি, উদ্ভূত পরিস্থিতি হওয়ার আগেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রাখা উচিত। তা না হলে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকছেই।
অন্যদিকে, আইনজীবীরাও বলেছেন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করলেও জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে সুরক্ষার স্বার্থে আদালত প্রাঙ্গণও বন্ধ ঘোষণা জরুরি।
সোমবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর আদালত প্রাঙ্গণে সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতি। যাদের বেশিরভাগই গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা। সেবা প্রত্যাশী এসব মানুষের ভিড়, আর ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকাটা নিরাপদ মনে করছে না কেউই। কিছু মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও হরহামেশাই ঘোরা ফেরা করছে হাঁচি, কাশি ও সর্দি আক্রান্ত অনেকে।
আদালত প্রাঙ্গণে থাকা চা-বিস্কুট ও পান-সিগারেটের দোকানগুলোতেও আছে উপচে পড়া ভিড়। পরিস্থিতি এমন যেন করোনা আতঙ্কমুক্ত এলাকা। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এতো লোকের সমাগম কোনো মতেই নিরাপদ নয়।
আদালত প্রাঙ্গণে আইনি সেবা নিতে আসা বদরগঞ্জের আবুল মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আইজ কেসের ডেট পড়ছে। না আসি উপায় নাই। হামার মনোত করোনার চ্যায়া আইনের প্যাঁচের ভয় বেশি। আদালত বন্ধ ওইলে তো ভালোয় হয়। কিন্তু সরকার তো বন্ধ করে নাই। এই জনতে মাইনসের ভিড়ও কমে নাই।’
সুমাইয়া পারভীন নামে আরেক সেবা প্রত্যাশী বলেন, ‘আমি সচেতন। মাস্ক পড়ে বের হয়েছি। কিন্তু পুরো আদালত প্রাঙ্গণ দেখে তো মনে ভয় হচ্ছে। এখানে ভালোভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। করোনাভাইরাস রোধে জনসমাগম এড়াতে কোনো নির্দেশনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি থাকছেই।’
এ বিষয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবী ওসমান গণি শুভ্র বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বর্তমানে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আদালতে শুধু জরুরি মামলার জামিন শুনানি চলছে। আগের চেয়ে এখন তেমন উপস্থিতি নেই।’
অন্যদিকে আরেক আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে, কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণে তো লোকজন কমছে না। দিন দিন করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সবার মধ্যে একধরনের ঝুঁকি রয়েছে। তাই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত আদালতের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা দেওয়াটা জরুরি।’
এ ব্যাপারে জানতে রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনজীবী আব্দুল মালেকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।