কুমিল্লায় প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের ১৫ সহস্রাধিক জনবলের অধিকাংশের পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই। এর মধ্যে কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এরইমধ্যে চলতি মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে কুমিল্লায় এসেছেন ১৬ হাজারের বেশি প্রবাসী। এ নিয়ে কুমিল্লা জেলা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলায় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল রয়েছে তিন হাজারের বেশি। বেসরকারি সাড়ে তিন শতাধিক হাসপাতালে রয়েছেন আট হাজারের ওপর কর্মকর্তা-কর্মচারী। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ১ হাজার ১৩২জন। কুমিল্লা জেলা পুলিশের রয়েছে ২ হাজার ৪০৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. আতাউর রহমান জসিম বলেন, কুমিল্লায় ১ হাজার ৫০০ চিকিৎসক রয়েছেন। চিকিৎসক ও হাসপাতাল স্টাফদের পিপিই জরুরি। সরকারি হাসপাতালে কিছু পিপিই এসেছে। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নিরাপত্তা নিতে বলা হয়েছে। আমাদের সংগঠন থেকেও কিছু পিপিই তৈরি করছি।
বেসরকারি চিকিৎসক সমিতি কুমিল্লার সভাপতি ও বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতি কুমিল্লার কোষাধ্যক্ষ ডা.একেএম আবদুস সেলিম বলেন, চিকিৎসক ও স্টাফরা নিরাপদ না হলে কিভাবে সেবা দিবেন। বেসরকারি ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসকদের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পিপিই তৈরির জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি সবাই এটা মানবেন।
এদিকে, ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে যত বড় দুর্যোগ আর মহামারি আসুক আমাদেরকে সব সময় মাঠেই থাকতে হয়। আর বর্তমান অবস্থায় যদি আমাদেরই সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে আমরা কিভাবে কাজ করবো।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, মাঠে স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের থাকতে হচ্ছে। সরকারের দিকে না তাকিয়ে থেকে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হলেও সবার নিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এটা না করা হলে ঝুঁকি আরো বাড়বে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা.নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমরা কিছু পিপিই পেয়েছি। তা মাঠে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সুরক্ষার বিষয়ে বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। যে পরিমাণ পিপিই এসেছে তা পর্যাপ্ত নয়। তবে আমাদেন আইসিইউ চালু করা জরুরি। আইসোলেশন বেড থাকলেও আইসিইউ ছাড়া কাউকে চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, পিপিই তৈরি করার জন্য নির্দেশনা এসেছে। তবে বরাদ্দ নেই। আমাদের কিছু রেইন কোর্ট আছে, সেগুলোকে ব্যবহারের উপযুক্ত করছি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো.আবুল ফজল মীর বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে কুইক রেসপন্স টিম করা হয়েছে। সবাইকে ব্যক্তি উদ্যোগে পিপিই তৈরির জন্য বলা হয়েছে। তারা কাপড় কিনে বানিয়ে ফেলবে। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে আমাদের প্রচার-প্রচারণা ও বাজার মনিটরিংসহ সামগ্রিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।