আজ ২৫ মার্চ, বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। ১৯৭১ সালের এই রাতে বাংলাদেশে সংগঠিত হয় বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ও নিষ্ঠুরতম গণহত্যা। ১৯৭১ সালের এই রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরপরাধ, নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এভাবে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই রাতের নারকীয় হত্যাযজ্ঞসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার স্মৃতি স্মরণ করে দিবসটি পালন করা হলেও এবার করোনা ভাইরাসের কারণে সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরুষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। পূর্ব বাংলায় সৈন্য সমাবেশ করে। ২৫ মার্চ সার্চ লাইট এর নামে গণহত্যার আদেশ দিয়ে গোপনে পাকিস্তানে চলে যায় ইয়াহিয়া খান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেই কালরাতে অতর্কিত নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। মাত্র ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা রাজাকার আলবদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে। এত অল্প সময়ে এত মানুষ হত্যা করার নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সম্ভ্রমহানি করা হয় ২ লাখ মা বোনের। লাখ লাখ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়। বাড়িঘর ছেড়ে প্রায় ১ কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তচ্যুত হয় আরও প্রায় ৩ কোটি মানুষ।
আওয়ামী লীগ সরকার ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদে এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং ২০ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। সেই থেকে পালিত হয় গণহত্যা দিবস। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।