মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এর অভাবে ভুগছেন সিলেটের চিকিৎসকরা। পিপিই সংকটে নগরের বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রয়েছে। যেগুলো খোলা আছে সেখানেও হাতেগোনা কয়েকজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন।
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও স্বর্দি, কাশি ও জ্বর আক্রান্ত রোগীদের এড়িয়ে চলছেন। নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ইর্টান চিকিৎসকরা পিপিই এর দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। সিলেট জেলার সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল বলছেন, সকল চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। শুধু যারা করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহজনক রোগীদের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত তাদের পিপিই প্রয়োজন।
সিলেটে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কয়েক হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। এর বাইরে ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স রয়েছেন আরও কয়েক হাজার। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বুধবার (২৫ মার্চ) সকালে সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতল চত্বরে আগের মতো ভিড় নেই। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের সংখ্যাও কম।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, আগে হাসপাতালে নিয়মিত ২ হাজার থেকে ২২শ রোগী ভর্তি হতেন। এখন ৮শ থেকে ১ হাজার রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতেন। এখন ১ হাজারেও কম রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, পিপিই সংকটে চিকিৎসকরা আতঙ্কে আছেন। পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া চিকিৎসকরা কিভাবে রোগী দেখবেন? হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাই আতঙ্কে আছেন। আমরা কিছু পিপিই পেয়েছি। তবে তা পর্যাপ্ত নয়।
সিলেট নগরের ওসমানী মেডিকেল কলেজ সড়কের দুই পাশে থাকা বেশিরভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারই বন্ধ পাওয়া গেছে। যেগুলো খোলা আছে সেখানেও মাত্র কয়েকজন চিকিৎসক আছেন।
নগরের কাশলশাহ এলাকার মেডিএইড ডায়গনেস্টিক সেন্টার গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। ডায়গনেস্টিক সেন্টারের সামনে টাঙানো এক নোটিশে লেখা হয়েছে ‘অনিবার্য কারণবশত সকল ডাক্তার চেম্বার বন্ধ থাকবে’। মেডিএইড ডায়গনেস্টিক সেন্টারে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা ইনাম আলী জানান, গত শুক্রবার থেকে ডায়গনেস্টিক সেন্টারটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে নিয়মিত ১২ থেকে ১৫ জন চিকিৎসক রোগী দেখতেন।
সিলেটের সবচেয়ে বৃহৎ পপুলার মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে অনেকেটা ফাঁকা দেখা যায়। এ মেডিকেল সেন্টারে তথ্য ও অনুসন্ধান বিভাগের একজন কর্মী জানান, এখানে নিয়মিত প্রায় ৬০ জন চিকিৎসক রোগী দেখেন। তবে এখন রোগী দেখছেন মাত্র ৬ জন। করোনাভাইরাসের সংক্রামণ রোধে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই এখানে। দুই একদিনের মধ্যে মেডিকেল সেন্টারটি বন্ধও হয়ে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
নগরের রিকাবীবাজারের ট্রাস্ট মেডিকেল সার্ভিস-এর সামনে ব্যানারে সর্দি, কাশি ও জ্বর আক্রান্ত রোগীদের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে। ট্রাস্ট মেডিকেল সার্ভিসেসের ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক রোগী দেখতেন। এখন শুধু এখানে জরুরি ভিত্তিতে ইসিজি সেবা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মেডিকেল সার্ভিস বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে অবস্থার উন্নতি হলে চিকিৎসকরা রোগী দেখবেন।
একই এলাকার ইবনে সিনা ডায়গনেস্টিক সেন্টার এন্ড কনসালটেশন সেন্টারও বন্ধ প্রায়। এখানে আগে নিয়মিত ২৮ জন চিকিৎসক রোগী দেখলেও এখন দেখছেন মাত্র ৪ জন। ইবনে সিনা ডায়গনেস্টিক সেন্টার এন্ড কনসালটেশন তথ্য ও অনুসন্ধান বিভাগে কর্মরত মাসুম মিয়া বলেন, চিকিৎসকেরা নিরাপত্তা সংকটে আছেন। তাদের পিপিই নেই। আমরা চারজন আগে কাজ করলেও এখন ভাগ করে একজন কাজ করছি। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে চিকিৎসকরা আসবেন না।
এদিকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এর দাবিতে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৫০ ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করেছেন। গত সোমবার থেকে তারা কর্মবিরতিতে নেমেছেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর এক লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন, পিপিই ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ায় দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় তারা পিপিই ছাড়া চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, যে পরিমাণ পিপিই প্রয়োজন সেই পরিমাণ পিপিই নেই। তবে সব ডাক্তারের এখনই পিপিই প্রয়োজন নেই।