ঢাকা: লাঠিপেটা বা জল কামান নয়, আন্দোলনকারীদের মাঝে মিশে গিয়েও যে নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফেরানো যায়, সেই উদাহরণটাই ফের সামনে নিয়ে এলো ঢাকা জেলা পুলিশ।
পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ- এই চেতনা নিয়ে জেলা পুলিশের এই ভূমিকা এখন প্রশংসিত হচ্ছে জেলার সর্বত্র। যে কারণে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢাকা - আরিচা মহাসড়কে হয়রানির শিকার হতে হয়নি কোনো সড়ক ব্যবহারকারীকে। পুলিশের সদয় আর মমতাময় ভূমিকাই সামাল দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
অনেকেই বলছেন, পুলিশের এ ধরনের ভূমিকা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে দ্রুত সহনীয় করতে পারে। যার জন্যে প্রয়োজন পুলিশ বাহিনীর প্রতি সঠিক নির্দেশনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রোকসানা জামান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের টানা ষষ্ঠ দিনের আন্দোলনে পরিবহন চলাচল সীমিত হলেও সাভারবাসীকে স্বস্তিতে রেখেছে পুলিশের ভূমিকা। যার বড় কৃতিত্ব ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।'
শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, 'কোনো উষ্কানির ফাঁদে পা দেওয়া নয়, নয় কঠোর কোনো ব্যবস্থা। সব সময় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতি 'কোমলভাবে' মোকাবিলা করার। অারও বলা হয়েছে, 'ওরা আমাদের সন্তান। সড়কে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক ও শিশুবান্ধব আচরণের বিষয়েও সচেতন করা হয়েছে। প্রথমে আমরা মনে করেছি ওরা আমাদের সন্তান। আমার টিম সেটাই দেখিয়েছে।'
তিনি অারও বলেন, 'নিরাপদ সড়কের দাবি আমাদেরও। সড়কে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে আমাদের অনেক সদস্য সড়কে প্রাণ দিয়েছেন।আমরা সড়কে বেঘোরে কাউকে মরতে দিতে পারি না। সরকারও তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে। কিন্তু দাবি আদায় করতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনকে কেউ যাতে বিতর্কিত করতে না পারে, কেউ যাতে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা নিয়ে জনজীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে না পারে- সে ব্যাপারে আমরা বেশ সজাগ।'
পুলিশ সুপারের এই বক্তব্যের সত্যতা মেলে সাভারের সড়কে। সেখানে শিক্ষার্থীদের মিছিলের মাঝে ঢুকে কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে দেখা যায় সাভার মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদুজ্জামান ভূইয়াকে। এসময় তাদের বাড়াবাড়ি না করে অসহিংস আন্দোলন বজায় রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট দেখা যায়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পুলিশের ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তার একটি ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল। জুয়েল নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে এই ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, 'সাভারের মতো শান্তির জায়গা আর কোথাও আছে? এখানে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ তো করছেই না, বরং তাদের হাতে হাত মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অান্দোলন চালিয়ে যওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। সাভারের পুলিশ প্রশাসনকে দেখে সারা দেশের পুলিশদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।'
এসআই ফরহাদুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, 'আমি ডিউটিতে ছিলাম। আমাদের প্রতি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্যারের নির্দেশনা ছিল, ওদের অনুভূতিকে আগে সন্মান দেওয়া। আবার দেখতে হবে কোমলমতি এই শিক্ষার্থীদের অনুভূতিকে ব্যবহার করে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে। স্যারের নির্দেশ মেনে আমরা কাজ করছি।কখন কে ছবি তুলেছে তাও খেয়াল করিনি।ছবিটি ফেসবুকে ভাইরাল হবে- এটাও ভাবি নি।'