করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশের মত রংপুরেও সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, প্রতিষ্ঠানসহ শপিংমল ও গণ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বৈশ্বিক এ মহামারিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দেয়া হয়েছে ১০ দিনের ছুটি।
শহর, বন্দর, গ্রামে জনসমাগম এড়িয়ে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরের বাহিরে বের হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। যাদের এক বেলার পরিশ্রম আর রিক্সা, ভ্যানের চাকা না ঘুরলে চুলোয় ভাতের হাড়ি উঠবে না। তারাও চিন্তিত করোনার প্রাদুর্ভাবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বর, বাস টার্মিনাল, লালবাগ, রেল স্টেশন ও জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রিকশা, ভ্যান ও অটো চালকরা সামান্য আয়ের আশায় রাস্তায় বের হয়েছেন। দিনমজুর ও শ্রমিকরা আছেন বাহিরে। তবে উপস্থিতির দিক থেকে সমাগম কম। নিম্ন আয়ের এসব মানুষ করোনার ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরের অলিগলি ছুটছেন।
নগরীর শাপলা চত্বরে কথা হয় রিকশাচালক মনসুর আলীর সাথে। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘হামার করার কিছু নাই। একবেলা ইসক্যা না চালাইলে খামো কি। গরীবের ঘরে খাবার ব্যবস্থা করি দ্যাশোত কার্পু করলে ভালো হইল হয়।’
অন্যদিকে কাজের খোঁজে বাস টার্মিনালে বসে থাকা দিনমজুর কাশেম মিয়া বলেন, ‘ঘরের তো বউ বাচ্চাক থুইছি। কিন্তু মুইয়ো যদি বন্দি থাকো, তাইলে খাবার দেবে কায়। যদি এক দুইশো টাকা কামাই হয়, এই জনতে বাইরোত আচু।’
এদিকে শহরের ছোট যানবাহনের পাশাপাশি চলাচল করছে জরুরী সেবায় নিয়োজিত পরিবহনগুলো। খোলা রয়েছে ফার্মেসি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার দোকান। এসব দোকানে খুব একটা ভিড় নেই।
হাট বাজারের পাশে টাকা উত্তোলনের বুথ খোলা রয়েছে। তবে এসব বুথে নেই করোনা ঝুঁকি মোকাবেলায় গ্রাহক সুরক্ষার উদ্যোগ। বিশেষ করে বুথগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি।
এদিকে করোনার মতো ভয়াবহ এই ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ থেকে জনগণকে ঘরমুখো রাখতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসন থেকে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা ও মাইকিং। রাস্তাঘাটে জটলা এড়িয়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হতে বারণ করা হচ্ছে।
এব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, করোনাভাইরাস রোধে সঙ্গরোধ মেনে ঘরে অবস্থান করার জনগণকে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি বার বার হাত ধোয়া, জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার ও হাঁচি, কাশি, জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে সচেতন মহল বলছেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে অল্প কিছু মানুষের ভুল থেকে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।
রংপুরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সচেতনতার অভাব থেকেই মানুষজন এখনো বাহিরে চলাফেরা করছে। এধরণের চলাফেরাও ঝুঁকিপূর্ণ। সবাই যদি নিয়ম মেনে কিছুদিন সঙ্গরোধে থাকে তবেই করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় স্বস্তি মিলবে।