চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ-ষোলশহর কর্ণফুলী মার্কেটে ছিলনা সঙ্গরোধের কোনোই বালাই। অবসর বিনোদনের মতো জটলা করে আড্ডা দিচ্ছিল আশেপাশের এলাকার লোকজন। চা, পান, সিগারেটের দোকানে ভিড় করে খোশমেজাজে গল্পগুজবে মেতেছিল সাধারণ মানুষ। করোনার বিস্তার ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে সেনা টহল শুরু হতেই নিমেষে বদলে গেলো দৃশ্যপট।
শুধু চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ-ষোলশহর নয়, পুরো নগরের চিত্রই পাল্টে গেছে। বারংবার ঘরে থাকার জন্য সবাইকে বলা হচ্ছিল। কিন্তু অনেকেই গুরুত্ব দেননি তাতে। সেনা টহলের পর সবার টনক নড়েছে।
'লোকজনের কাজ নেই, অফিস বন্ধ, সবাই মার্কেটের সামনে দেখা, সাক্ষাত, আলাপের জন্য জমা হতো। করোনার কারণে ঘরে থাকার নির্দেশ মানতো না অনেকেই। আর্মি নামার পর কাজ হয়েছে', বললেন ঘরোয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মুজিবর মিয়া।
তার মতে, আরও আগে আর্মি নামানো হলে লোকজনের অহেতুক ভিড় ও জমায়েত কম হতো। করোনার বিরুদ্ধে সামাজিক সতর্কতা আরও সুদৃঢ় হতো।
একই মত হিলভিউ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মির্জা শফিকুল ইসলামেরও। তিনি বলেন, 'পাড়ায়-মহল্লায় দোকানের সামনে ও চায়ের স্টলে ছেলেছোকরাদের নিয়মিত আড্ডা চলতো। স্কুল, কলেজ বন্ধ করে ঘরে থেকে সঙ্গরোধ করার জন্য বলা হলেও অনেকেই তা মানতো না। সেনা টহলের ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।'
বুধ ও বৃহস্পতিবারে চট্টগ্রাম শহরে সেনা টহলের ফলে পথেঘাটে উটকো ভিড় কমেছে। তাছাড়া আতঙ্ক ছড়িয়ে ও দোকানে ভিড়ের চাপ সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর প্রবণতাও বন্ধ হয়েছে। মানুষের মধ্যে সাহস ও আশা বেড়েছে বলেও মনে করেন অনেকেই।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে বিদেশ প্রত্যাগতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সন্দেহভাজন রোগীদের চিহ্নিত করাও সহজ হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) বিকেলে হিলভিউ আবাসিক এলাকার চার নং সড়কের একটি বাড়িতে বিদেশি ভাড়াটিয়াদের পরীক্ষার ব্যবস্থাও নিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
করোনা ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে সেনা টহল শুরু হওয়ার পরে শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারা দেশের চিত্রই বদলে গেছে। ঘরে থেকে সঙ্গরোধের বিষয়টি বহুলাংশে প্রতিপালিত হচ্ছে। পথেঘাটে, মার্কেটে, বাজারে ভিড় ও জটলা কমেছে। কোনো জায়গায় পণ্য সরবরাহ, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসেবার গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশ থেকে বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এরকমই বহু ইতিবাচক তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও গৃহীত হচ্ছে নানা পদক্ষেপ, যাতে বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ করোনার বিরুদ্ধে চলমান লড়াইকে বেগবান করেছে। বিশ্বশান্তি ও দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত সশস্ত্র বাহিনীর সুদক্ষ ও চৌকস সদস্যদের মাঠ পর্যায়ের তৎপরতায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনা-জনিত সঙ্কুল পরিস্থিতিতে জনমনে আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ করোনা ঠেকাতে মাঠে সশস্ত্র বাহিনী, বেড়েছে সাহস ও আশা