দিন যত যাচ্ছে ততই মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সারা পৃথিবী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত। এটাকে করোনা যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, নগরপিতা ও বিভিন্ন দফতর মানুষের জীবনের নিরাপত্তায় বলা চলে কোমড় বেঁধে নেমেছে। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সবাই যে যার জায়গা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অথচ রাজধানীর অভিভাবকদের দায়িত্ব জ্ঞান নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয় 'কোথায় গেছেন ঢাকার মেয়ররা'। কোনো কোনো পক্ষ বলছে তারা তো এখনো দায়িত্ব বুঝে নেননি। আবার পাল্টা প্রশ্ন নগরবাসীর মধ্যেই কাজ করতে কি শুধু দায়িত্বের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এই সংকট কালীন সময়ে নিজ নিজ উদ্যোগেও তো কাজ করা যায়।
গত ২৪ মার্চ একজন নারী গণমাধ্যম কর্মী তার ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দেন 'করোনা মোকাবেলায় ঢাকার দুই নতুন মেয়রের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।' সেখানে কেউ বলেছেন উনারা দায়িত্ব বুঝে নেননি। আবার কেউ বলেছেন জনপ্রতিনিধির কোনো চেয়ারের প্রয়োজন পড়ে না। তার উপস্থিতিই বড় মহিমাময় করে তুলতে পারে পরিপার্শ্ব।
দুই পক্ষের যুক্তিই হয়তো ঠিক। তবে মেয়র হওয়ার আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, আমি নগরপিতা না আপনাদের সেবক হিসেবে পাশে থাকতে চাই। কখনো বলেছেন নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের মধ্যে এটা করবো, ওটা করবো।
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মেয়রদের মাঠে থাকা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন ভালো মন্দ যাই হোক মাঠে আছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। যদিও গুলশানে হাত ধোয়ার কর্মসূচি উদ্বোধন করা নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। তারপরেও তিনি থেমে নেই।
নিজ উদ্যোগেই ডিএনসিসি’র বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। আবার কখনো প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ডিএনসিসি'র রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটিয়ে মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তার চেয়ে বড় কথা এই সংকট কালীন সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) মেয়রের বনানী অফিসে এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০ হাজার পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, আলু, সাবান দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
তবে কোথাও দেখা যাচ্ছে না দক্ষিণ সিটির নব নির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসকে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। তারা বলছেন, দায়িত্বগ্রহণ করা হোক আর নাই হোক একজন সচেতন মানুষ হিসেবে দেশবাসীর এই দুর্দিনে তাকে মাঠে থাকা উচিত।
গত ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঢাকা- ১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তারা শপথ নেন। শপথের পরেই উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকে নানা কর্মসূচিতে মাঠে নামতে দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ সিটির নবনির্বাচিত মেয়র তাপসকে কিছু সংবর্ধনা ছাড়া কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এসময় অনেকটা গণমাধ্যমও এড়িয়ে চলেছেন তিনি।
২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হন আতিকুল ইসলাম। তবে ওই মেয়াদে মাত্র ৯ মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান তিনি। আইনি জটিলতায় ওই বছরের ডিসেম্বরেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আবারও একই পদে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচন করেন তিনি। ১ ফেব্রুয়ারির ওই নির্বাচনে জয়ী হলেও চলমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাকে। এজন্য আগামী ১৪ মে বোর্ডের মেয়াদ পূর্তির পর তিনি ডিএনসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। তবে তার আগেই নগরবাসীর পাশে দাঁড়াতে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠে মেনে পড়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'এখন আমি মেয়র হিসেবে নয় একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এবং সাবেক মেয়র হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা প্যানেল মেয়রের সঙ্গে শেয়ার করছি। আমি মানুষের পাশে ছিলাম আছি। শুধু চেয়ারে বসলেই কাজ করবো তা নয়। আমি শপথ নেওয়ার পর থেকে কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে মশক নিধন কার্যক্রমের খবর নিচ্ছি। এটা নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি চাই অন্যরাও এই দুর্যোগকালীন সময়ে এগিয়ে আসুক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে না হোক সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে করোনা সংকট কালীন সময়ে নিজ উদ্যোগে কোনো কর্মসূচি নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।