এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে করোনা প্রতিরোধে ময়মনসিংহে নানা কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। করোনা মোকাবিলায় সেনা সদস্যরাও টহল দিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সতর্ক করছেন। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও মাঠে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছেন। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সর্বমহলের এমন ব্যাপক তৎপরতায় ইতিবাচক সাড়া পড়েছে জনজীবনে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই সরকারি সকল অফিসের সামনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা চালু করে প্রশাসন। একইসাথে পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, বনবিভাগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে পানির ড্রাম ও বেসিন বসিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ায় উদ্বুদ্ধ করে সাধারণ মানুষদের। তথ্য অফিস নগরজুড়ে চালায় প্রচারণা কার্যক্রম।
সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নগরের চরপাড়া, গাঙ্গিনারপার, টাউনহলসহ দুই শতাধিক পয়েন্টে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করে। প্যাডেল ও মটরচালিত রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও, ২০টি স্থানে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, ৫০টি স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে ও ৪টি গাড়ির মাধ্যমে নগরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা-ঘাট জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত ধৌতকরণ এবং ৭০টি স্থানে মাইকিং এর মধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মসিক। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেয়র ইকরামুল হক টিটু ঘুরে ঘুরে সকল কাজ তদারক করছেন।
বাজারের দরদাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করায় জরিমানা করা হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানকে। র্যাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন প্রতিদিনই বিভিন্ন বাজারে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা চোখে পড়ার মত।
ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিও তাদেরকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে। বাজারদর সহনীয় পর্যায়ে রাখতে টিসিবি কর্তৃক খোলা বাজারে পিঁয়াজ, তেল, ডাল, চিনি বিক্রি করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে। নিন্ম আয়ের মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে খাদ্য অধিদপ্তর স্বল্প মূল্যে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি করছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে করোনা সম্পর্কিত একটি মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। তারা তাদের সমস্ত ছুটি বাতিল করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা জারি করেছে। যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে অগ্নিনির্বাপণকারী সদস্যরা।
জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাব অধিনায়ক, সিটি মেয়রসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিগণ তারা প্রতিনিয়ত করোনা মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগও করোনা মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। দুটি হাসপাতালে ৬০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট চালু করেছেন এবং বিদেশফেরত প্রবাসীদের বাড়িতে সঙ্গরোধ নিশ্চিতকরণে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কঠোর ভূমিকা পালন করছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা সাধারণ মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি কর্মহীন মানুষদের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন।
করোনা প্রতিরোধ নিয়ে মসিক মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবেনা, গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। মসিক যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবুও সকলের চেষ্টায় এ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধিও পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসন সবসময়ই তৎপরতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
আর জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য সকল মহলকে সম্পৃক্ত করে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এজন্য সাধারণ নাগরিকদের সচেতন থেকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।