ঢাকার রাস্তা-ঘাট যে এতো প্রশস্ত এতোদিনে বুঝতে পারলাম। ২০ বছর ধরে ঢাকায় আছি। সব সময় আক্ষেপ হতো বিশ্বের অন্যান্য সিটির মতো ঢাকার রাস্তাগুলো যদি প্রশস্ত হতো।
করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় ফাঁকা রাস্তা দেখেই মুগ্ধ বীমা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। ভ্রমণপিপাসু এই বিমা কর্মকর্তা মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত অনেক সিটি ভ্রমণ করেছেন। অন্যান্য সিটির ভেতরের সড়কগুলো অনেক প্রশস্ত দেখে মাঝে মাঝে হতাশায় ভুগতেন। তার মনে হতো অপ্রশস্ত রাস্তার কারণেই হয়তো ঢাকায় সব সময় জ্যাম লেগে থাকে।
সোমবার (৩০ মার্চ) জরুরি কাজে বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর রোড দিয়ে শাহবাগ হয়ে রামপুরায় যান। পুরো শহরকে তিনি নতুন রূপে আবিষ্কার করেন। বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মূলত রাস্তাগুলোতে একটি লেন থাকে হকারের দখলে, আরেকটি লেনের সমান রাস্তা থাকে অবৈধ পার্কিং। মাত্র একটি কিংবা দেড়টি লেন থাকে গাড়ি চলাচলের জন্য। যে কারণে রাস্তা যে বড় এটাই বুঝতে আমার ২০বছর সময় পেরিয়ে গেলো।
বিশ্বের আর কোনো সিটির প্রধান সড়ক এভাবে হকারের দখলদারিত্ব দেখিনি। হ্যাঁ অনেক সিটিতে নির্দিষ্ট কিছু সড়ক রয়েছে হকার বসে যেগুলো সন্ধ্যার পর। ফুটপাত রক্ষা না করা গেলেও অন্তত রাস্তাগুলো যদি হকার মুক্ত রাখা যেতো তাহলে এমন জট হতো না। আর প্রধান সড়ক রক্ষা করা না গেলে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল কোনো কিছুই চূড়ান্ত জ্যামমুক্ত করতে পারবে না বলে মনে করেন আনিছুর রহমান।
বহুদিন পর ঢাকার রাস্তায় যেন অন্য রকম একটি চিত্র। প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি। উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম এবং উন্নত খুব কম রাষ্ট্রেই এমন দেখা যায়। কিছুটা উন্নত বলে পরিচিত কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক কোথাও এমন পুলিশি উপস্থিতি লক্ষণীয় নয়।
ঢাকার মতো হাতের ইশারায় চলা কাঠমান্ডু ও আগরতলাতেও মোড়ে মোড়ে একজন করে কনস্টেবল শক্ত হাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন। আর আমাদের কনস্টেবলের পাশাপাশি, সার্জেন্ট, টিআই এমনকি এসি, ডিসিকেও পথে দেখা মেলে।
৩০ মার্চ এক ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। মিরপুর-১ নম্বর থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল হয়ে সাইন্স ল্যাবরেটরি, শাহবাগ, মৎস্যভবন, পল্টন গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পথে শুধু টোলারবাগে ২ জন পুলিশ, ভিআইপি রোডের মুখে ২ জন, শাহবাগ পুলিশ বক্সের মধ্যে ৩ জন ও মৎস্য ভবনের পুলিশ বক্সে ২ জন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। অন্যদিকে মাতুয়াইলে পুলিশি টহল দেখা গেছে।
ফাঁকা রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন, উন্নত রাষ্ট্রের মতো ঝকঝকে প্রশস্ত রাস্তা রাজধানী শহর ঢাকা নিজেকে নতুন রূপে জানান দিচ্ছে। নেই কোনো কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি, নেই হাইড্রোলিক হর্নের উৎপাত। স্বল্পসংখ্যক প্রাইভেট গাড়ি চলছে শাই শাই করে। আর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্র রিকশার দাপট। তবে যাত্রী কম থাকায় আয় অনেক কমে গেছে।