১১ দিন ঘরবন্দী, সাহায্যের আকুতি বেদে সম্প্রদায়ের

, জাতীয়

মোঃ রফিকুল ইসলাম,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম,মাদারীপুর | 2023-08-24 17:29:10

‘ও রানি সালাম বারে বার, নামটি আমার জোসনা বানু রানী, থাকি লক্ষার পাড়, মোরা এক ঘাটেতে রান্ধি বাড়ি, আরেক ঘাটে খাই, মোদের সুখের সীমা নাই-বেদের মেয়ে জোসনা সিনেমার এই জনপ্রিয় গানটি বহন করছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বেদে সম্প্রদায়ের কথা। এই গানটিতে  বেদে সম্প্রদায়ের সুখ -শান্তি ও  অপরূপ রূপের কথা বলা থাকলেও তাদের জীবন-যাপনের মাঝে লুকিয়ে আছে বিষাদময় গল্প।

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর গ্রামে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছে বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবার।

ঢাকা- খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচর উপজেলার পাচ্চর বাসস্ট্যান্ডের কাছেই প্রায় ৬০ টি পরিবারের  ২০০ মানুষের বাস। এদের মধ্যে ৫০ জন ভোটার। এক সময় তাদের মূল পেশা ছিল তাবিজ-কবজ বিক্রি করা, কখনোবা সাপের খেলা দেখানো।  বর্তমানে এই পল্লীর পুরুষের পেশায় রাজ মিস্ত্রী ও গ্রামে গ্রামে ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রি করেন। মহিলারা কেউ সিঙ্গা দিয়ে ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান।

করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী  গত ১১ দিন ধরে শিবচরের ৪টি এলাকায় প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ  প্রশাসনের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। শিবচর পৌর বাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ ২টি ওয়ার্ড ও ২টি ইউনিয়নের ২ গ্রামসহ পুরো উপজেলার প্রতিটি গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন  করা হয়েছে। এসব এলাকায় পুলিশ পাহাড়ায় রেখে মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।

আজ ১১ দিন ধরে তাদের কাজ কর্ম বন্ধ, খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে বেদে সম্প্রদায়ের

নিত্যপ্রয়োনীয় দোকান ছাড়া সব দোকান-পাট বন্ধ থাকায় শিবচরের সব এলাকায় কমছে লোকজনের সমাগম। এমন পরিস্থিতিতে শিবচরে দিনে এনে দিন খায়-এমন মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এদেরেই একটি অংশ বেদে সম্প্রদায়।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, আজ ১১ দিন ধরে তাদের কাজ কর্ম বন্ধ। খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে।

তার জানান, যেহেতু শিবচর করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই প্রশাসনের আদেশ অনুযায়ী তারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সবার কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় খুব মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

রাশেদা বেগম নামের একজন চল্লিশোর্ধ এক নারী বলেন, 'আজ কয়েকদিন ধরে সব কিছু বন্ধ থাকায় অনেক কষ্ট করে চলছি। আর দুই একদিন এভাবে চললে তাদের না খেয়ে পড়ে থাকতে হবে।

বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার আনোয়ার  হোসেন জানান, আমাদের কেউ আইসক্রিম বিক্রি করতো, কেউবা আবার রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। কয়েকদিন হলো কেউ বের হতে পারেনা। কেউ আজ পর্যন্ত আমাদের খবর নিতে আসে নি। শুনতেছি ওই এলাকায় চাল ডাল দিচ্ছে। কিন্তু আমাগো এখানে কেউ আসে না।

এ বিষয়ে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন,  শিবচরে অসহায়,দুস্থ, প্রতিবন্ধী, বেদে সম্প্রদায় সকলেই আমাদের খাদ্য সহায়তার অংশ। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে  অসহায় গরিব লোকদের সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্য আমরা তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদান করব। এছাড়া আমরা নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর