সামাজিক দূরত্ব আদৌ কি বজায় থাকছে?

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 22:45:14

করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলছে। শুধু জরুরি সেবা সংস্থাগুলো খোলা রয়েছে। আর ব্যাংক খোলা রয়েছে অর্ধেক বেলা।

সাধারণ ছুটির দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম বন্ধ করা, কার্যত অঘোষিত লকডাউন ব্যবস্থা কার্যকর করা। আর এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন না হয়। গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য মাঠে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনীকেও।

কিন্তু সরকার ঘোষিত দীর্ঘ সাধারণ ছুটিকে যেন উৎসবে পরিণত করে ফেলেছেন অতি উৎসাহীরা। রাজধানীর অলিগলি দেখলে বোঝা যায় মানুষজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন না। প্রতিটি এলাকার চায়ের দোকানে, মুদি দোকানের সামনে দেখা যাচ্ছে মানুষের জটলা। কোথাওবা দল বেঁধে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন নগরবাসী।

বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি গলিতে এমন চিত্র দেখা যায়।

ত্রাণের আসায় একটি বাড়ির সামনে কর্মহীন মানুষের ভিড়

শ্যামলী রিং রোডে সূচনা কমিউনিটি সেন্টার ও জাপান গার্ডেন সিটির সামনে দেখা যায় ছিন্নমূল মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ত্রাণের আশায়। কর্মহীন মানুষ ছাড়াও অনেকে বাসা থেকে বাইরে বের হয়েছেন ঘোরাঘুরি আর আড্ডা দিতে।

অন্যদিকে কাঁচাবাজারে তো উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে সবজির দোকান থেকে শুরু করে মাছের বাজার কোথাও মানুষের চোখেমুখে কোন ভয়ভীতি দেখা যায়নি। দিব্বি মাস্ক বা অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই বাজার করছেন এলাকাবাসী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারের এত পরিকল্পনা যেন হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।

মাছের বাজারে স্থানীয় কাউন্সিলর সালিমুল্লাহ সলু হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখলেও সেদিকে খেয়াল নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের। কিছু কিছু মানুষের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও বিক্রেতাদের মুখে একদমই নেই তা।

তাই কথা উঠেছে নিজে সুরক্ষিত থেকে কী হবে? যার হাত দিয়ে সবজি বা মাছ নিচ্ছি সে তো সুরক্ষিত না। সেখান থেকে তো ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না বলে জানান মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হায়দার আলী।

বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, আমি থাকি আদাবর ১০ নম্বর রোডে। সেখানে রাস্তার গলিতে প্রতিটি চায়ের দোকানে মানুষের ভিড়। কেউ তো দেখতে আসছে না। পুলিশ বলেন আর সেনাবাহিনী, দেখার কেউ নেই। আর দেখেই কতক্ষণ রাখবেন যদি মানুষ সচেতন না হয়।

হায়দার আলী আরো বলেন, বাজারে যার সবজির দোকান থেকে সবজি কিনছি তার তো কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। তার হাতে গ্লাভস নেই, মুখে মাস্ক নেই। এখন প্রয়োজনের তাগিদেই বাজার করতে হচ্ছে। সুরক্ষার ব্যবস্থা আসলে কি কিছু হচ্ছে!

পুরান ঢাকায় মেয়র সাঈদ খোকনের ত্রাণ বিতরণের খবর পেয়ে ভিড় জমান মানুষজন

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণকে ঘিরে চলছে মানুষের ঠেলাঠেলি। এমন একটি চিত্র দেখা যায় শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে। সেখানে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে শুনে ভিড় করেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। অনেকে ত্রাণ না পেয়ে রাস্তায় বসে আছেন। ওই বাড়ির গেটে যেভাবে মানুষ ঝুলে আছেন তাতে কেউ ভাইরাস বহনকারী হলে পুরো ভবনের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে পড়বেন।

বাড়িটির মালিকের ছেলে আফসার উদ্দিন সমবেত মানুষদের উদ্দেশে বলেন, এখন তো আর কিছু নেই। শুধু শুধু আপনারা ভিড় করছেন কেন? এখান থেকে চলে যান।

এরপরও সেখানে ত্রাণ প্রত্যাশী মানুষের ভিড় থেকেই যায়। এই চিত্র শুধু এখানেই নয়। পুরান ঢাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র যেখানে ত্রাণ সামগ্রী দিলেন সেখানেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।

মানুষ যেভাবে সকল বাধা উপেক্ষা করে রাস্তায় বের হচ্ছেন তাতে করোনা ঝুঁকি বড়ছে বলে মনে করছেন সচেতনরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর