রাজশাহীর শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার হরিণ শেডে ঢুকে মা হরিণ ও তিন বাচ্চা সাবাড় করেছে ৫টি কুকুর। ঘটনাটি জানা জানি হওয়ার পর ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরপরই চিড়িয়াখানার তত্বাবধায়কের কাছে প্রতিবেদন চায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
শনিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিনের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন। সেখানে নিজের কাঁধে তিনি দায় তো নেন-ই নি। দায়ী করেন নি চিড়িয়াখানার কোনো নৈশপ্রহরী এবং সুপারভাইজারকেও। অথচ ঘটনার দিনগত রাতেও চিড়িয়াখানায় দায়িত্বরত ছিলেন ৫ জন নৈশপ্রহরী।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত বা শুক্রবার ভোরের দিকে কয়েকটি কুকুর হরিণ শেডে ঢুকে পড়ে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খাদ্য সংকটে কুকুরগুলো খুবই ক্ষুধার্ত ছিল। হরিণ শেডে ঢুকে কুকুরগুলো বাচ্চা হরিণের উপর আক্রমণ করে। পরে একটি মা হরিণকেও কামড়ে মেরে ফেলে। ঘটনাটি নৈশ প্রহরী ও পশু পরিচর্যাকারীদের নজরে পড়েনি। এটি নিছক দুর্ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়।’
প্রতিবেদন বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘হরিণ শেডটি লোহার তার দিয়ে ঘেরা। সেখানে কুকুর ঢোকার কোনো সুযোগই নেই। কিন্তু হিংস্র ও ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো শেডের লোহার তারের নিচের অংশের মাটি পা দিয়ে খুঁড়ে সরিয়ে ফেলে। সেখান দিয়ে পথ তৈরি করে ভেতরে প্রবেশ করে কুকুর।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিড়িয়াখানার এতবড় এরিয়ায় ৫ জন নৈশপ্রহরী ছিল। এক কোণায় যদি কয়েকটি কুকুর এভাবে খুঁড়ে ঢুকে পড়ে সেটা দুর্ঘটনা ছাড়া আর কী বা বলবেন? আমি প্রতিবেদন দিয়েছি, সিটি করপোরেশন আরও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
জানতে চাইলে রাসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে ঘটনা অকপটে ঘটনা স্বীকার করেছে। তারা নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করেননি। এখন আমরা সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করবো। তারা তদন্ত করে দেখবে আসলে কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা। যদি তদন্তে কেউ দায়ী বলে প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, শনিবারও চিড়িয়াখানার ভেতরে অন্তত ৭টি এবং আশেপাশে অনেক হিংস্র কুকুর ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। ফলে চিড়িয়াখানার অন্য প্রাণীও সাবাড় হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দাবি- চিড়িয়খানা থেকে সব কুকুর তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, ‘কুকুরগুলোকে তো তাড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছি। বের করে দেওয়াও হয়েছে। দু-একটি যদি থেকেও থাকে, সেগুলোকেও বের করে দেওয়া হবে।’
জানা যায়, শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ভোরে চিড়িয়খানায় কুকুরের দল ঢুকে ৩টি হরিণ শাবক ও তাদের মা হরিণকে খেয়ে ফেলে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শেডের মধ্যে পড়ে থাকা হাড়-গোড় ও অবশিষ্টাংশ তড়িঘড়ি করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলে কর্মচারি-কর্মকর্তারা। পরে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন তারা।
তাদের হিসেব মতে- বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শেডে ৭৫টি হরিণ ছিল। শুক্রবার সকালে গুণে ৭১টি পাওয়া যায়। আর দু’টি হরিণের অর্ধেক শরীর ও বাকিগুলোর হাড় এবং চামড়া পড়ে ছিল শেডের ভেতরে।
উল্লেখ্য, চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতায় ২০১৫ সালের এপ্রিলে একটি অজগর সাপ পালিয়ে যায়। যা নিয়ে গোটা নগরীত ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেই ঘটনার পর তদন্ত কমিটি এবং তদন্ত হলেও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: চিড়িয়াখানার ৪টি হরিণ শাবক খেলো ৫ কুকুর