রাজশাহী মহানগরীর হাজরাপুকুর এলাকার আতিকুল মাস্টারের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন হতদরিদ্র পাঁচটি পরিবার। গেল দুই সপ্তাহ ধরে কর্মহীন পরিবারগুলোর কর্তারা। ফলে স্বল্প সঞ্চয়ে চলছিল তাদের রুটি-রুজি। তবে গেল তিনদিন খাদ্য সংকটে পড়েন তারা। একবেলা করে সন্তানদের খাবার দিলেও নিজেরা না খেয়েই কাটিয়েছেন।
স্থানীয় না হওয়ায় তাদেরকে রাখা হয়নি কাউন্সিলরের ত্রাণ তালিকায়ও। আবার চক্ষু লজ্জায় চাইতেও পারেনি পরিবারগুলো। শেষ অবধি তারা বেছে নেন অভিনব পন্থা। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ডে দেয়া পুলিশ কমিশনারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে শুক্রবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিজেদের পরিচয় উল্লেখ করে লেখেন হৃদয়বিদারক এসএমএস।
এসএমএস-এ ওই পরিবারগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে একজন ব্যক্তি লেখেন, ‘মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়, আমরা আপনার গরীব প্রজা। শিরোইল কলোনি ওয়ার্ড ১৯ হাজরাপুকুর, আতিকুল মাস্টারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। অদ্যাবধি কোনো প্রকার সরকারি খাদ্য সহায়তা না পেয়ে পাঁচটি পরিবার অনাহারে। আমরা হতদরিদ্র প্রজা।’
তাতে সঙ্গে সঙ্গে সাড়াও মিলেছে। পুলিশের উদ্যোগে অনাহারী পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে খাদ্যসামগ্রী। রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুম মুনির ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন ঘটনা।
শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওসি বলেন, ‘কমিশনার স্যার আমাকে শুক্রবার রাতে এসএমএস করেন। সেখানে ওই এসএমএসটি জুড়ে দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। রাতেই আমরা পরিবারের সঙ্গে দেখা করি। তাদের মাঝে নিজেদের অর্থে ৫০ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল, ৫ লিটার সয়াবিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।’
পরিবারের দু’জন পুরুষ সদস্য জানান, বাড়িতে যারা থাকেন, সকলে দিনমজুর। কেউ কেউ সেলসম্যান, তাদের চাকরিও স্থায়ী নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে গেল দুই সপ্তাহ তারা কর্মহীন। হাতে খুব অল্প পরিমাণ সঞ্চয় ছিল, তা দিয়ে এক সপ্তাহ চালিয়েছেন। গত দু-তিন দিন তারা প্রত্যেকেই খুব সংকটে। আলুভর্তা করে কোনোমতে একবেলা সন্তানদের খাওয়াতে পারলেও নিজেরা অনাহারী থেকেছেন। স্থানীয় না হওয়ায় সাহায্যও পাচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে তারা কমিশনারকে এসএমএস করার সিদ্ধান্ত নেন।
আরএমপি কমিশনার হুমায়ন কবীর বলেন, ‘এসএমএস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি চন্দ্রিমা থানার ওসিকে তা ফরোয়ার্ড করি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলি। ওসি ও অন্য পুলিশ সদস্যরা নিজ উদ্যোগে তাদেরকে সাধ্যমতো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। আগামীতেও তাদের পাশে থাকবে পুলিশ।’