গ্রামে গ্রামে চলছে স্বেচ্ছায় 'লকডাউন'

, জাতীয়

স্টাফ ও ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 10:13:44

দিন দিন দেশে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে এই করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় যদি না দেশের মানুষ সচেতন হন। সরকার থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মানুষকে প্রতিদিনই সচেতন করার চেষ্টা করছে। তাদের এই সচেতনতা কেউ মানছেন, কেউ আবার মানছেন না। তবে সচেতনতার দিক থেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রংপুর, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের কিছু এলাকার মানুষজন।

এই তিন জেলার কিছু এলাকার মানুষ করোনা নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করেছেন। অবাধ মেলামেশা ও বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে এলাকাবাসীরা নিজ উদ্যোগেই এলাকার প্রবেশ পথ বন্ধ করে স্বেচ্ছায় 'লকডাউন' ঘোষণা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সেনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় লকডাউনে যাবার ঘোষণা দিয়ে সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রোডে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছেন। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ উল্লেখ করে ঝোলানো দিয়েছে সতর্কতা বার্তা।

বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গ্রামের লোকজন
বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গ্রামের লোকজন

একই কাজ করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলার ১৪ নম্বর দূর্গাপুর ইউনিয়নের শঠিবাড়ী হরিপুর (সরকারপাড়া) এলাকার সচেতন বাসিন্দারা। করোনা পরিস্থিতির কারণে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী স্বেচ্ছায় লকডাউনে থেকে বহিরাগতদের গ্রামে প্রবেশ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন।

প্রতিটি গ্রামের পাড়া-মহল্লার অলিগলি বন্ধ করে দিয়ে জরুরি লকডাউন ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করছেন শঠিবাড়ী সেড়ুডাঙ্গা বাজার এলাকার আবু বকর সিদ্দিক।

বার্তা২৪.কম-কে সাবেক এই পুলিশ সদস্য বলেন, হরিপুর সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। প্রশাসনের ঘোষণার অপেক্ষা না করে তারা স্বেচ্ছায় লকডাউন নিয়েছে। নিজের স্বার্থে এবং পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য সকলকে ঘরে থাকা জরুরি।

রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে গ্রামবাসী
রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে গ্রামবাসী

একই ধরনের কাজ করেছে টাঙ্গাইলের ৫টি গ্রাম। নিজ থেকে লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গুঁড়ি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চলাচলের রাস্তা।

সোমবার (৬ এপ্রিল) ঘাটাইল ও গোপালপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রবেশপথে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গোপালপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মোহনপুর, কামাখ্যা বাড়ি, মাঝপাড়া, ধুলটিয়া ও নবধুলটিয়া গ্রামের মানুষজন গ্রামের প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। সেখানে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে নোটিশ। সেখানে লেখা রয়েছে ‘প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি ছাড়া বহিরাগতদের গ্রামে প্রবেশ নিষেধ।’

সচেতনতার ব্যানার ঝুলছে প্রবেশ বন্ধ বন্ধ করে দেওয়া বাঁশের সঙ্গে
সচেতনতার ব্যানার ঝুলছে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া বাঁশের সঙ্গে

ধুলটিয়া গ্রামের হিমেলুর রহমান হিমেল বলেন, ‘গ্রামে আড্ডা দেয়ার জন্য প্রতিদিন অনেক বহিরাগত যুবক এখানে আসে। তাদের এ বেপরোয়া চলাফেরায় গ্রামে করোনা ঝুঁকি এড়াতে সচেতন গ্রামবাসী এ উদ্যোগ নিয়েছেন।’

অন্যদিকে ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের সাধূর গলগন্ডা গ্রামের প্রবেশ মুখে ঘাটাইল-ভূঞাপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে গিয়েছে গ্রামবাসী। গ্রামে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না এবং গ্রামবাসী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের বাইরে বের হচ্ছেন না বলে গ্রামের অনেকেই জানান। এছাড়া গুনগ্রামের প্রবেশ মুখ বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে গ্রামের যুবকরা।

এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ পাঁছপাড়া গ্রাম লকডাউন করে দিয়েছেন স্থানীয় যুবকরা। গ্রামে প্রবেশের তিনটি সড়কের মাথায় অস্থায়ীভাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যারিকেড। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নতুন কেউ গ্রামে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। গ্রামের বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশের সময় বাধ্যতামূলক হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর