করোনার সাথে ভাঙন আতঙ্ক, নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা | 2023-08-23 01:20:23

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্ক‌ের মাঝে খুলনার কয়রায় গ্রামবাসী নতুন করে বেড়িবাঁধে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কপোতাক্ষ নদীতে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি বেড়ে কয়রার দশালিয়া ওয়াপদার বেড়িবাঁধে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বুধবার (০৮ এপ্রিল) সকালে খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেয়া দেয়। পরে বিকালে বেড়িবাঁধের ভাঙন ভয়াবহভাবে দেখা যায়। করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে লবণ পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছে। তবে রাতে পূর্ণিমার বড় জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। উক্ত বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০০ ফুট রাস্তার উপর দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

দশহালিয়া গ্রামবাসীরা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩-১৪/২ নং পোল্ডারের মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে বেড়িবাঁধে ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব স্থান গুলিদিয়ে দুপুরে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধসে গেছে বেড়িবাঁধের কয়েকটি অংশের মাটি। অধিকাংশ জায়গায় বাঁধের গোড়ায় মাটি না থাকায় সংকীর্ণ ও খাড়া হয়ে গেছে বেড়িবাঁধের রাস্তা। দুর্বল বাঁধ ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে  বিস্তীর্ণ এলাকা।

কপোতাক্ষ নদীতে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি বেড়ে কয়রার দশালিয়া ওয়াপদার বেড়িবাঁধে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে

মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ আল মামুন লাভলু বলেন, দশহালিয়ার বেড়িবাঁধ মারাত্বক হুমকির মুখে রয়েছে। বাঁধ উপচে পানি ভিতরে প্রবেশ করছে।  যে কোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে । ভাঙন রোধে কাজ অব্যহত রয়েছে। বিষয়টি পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমাদী সেকশন কর্মকর্তা সেলিম মিয়া  বলেন, দশহালিয়া ও হোগলার ২ টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে সেখান দিয়ে পানি ওভার ফ্লো হচ্ছে শুনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি এবং বেড়িবাঁধের স্পর্শকাতর স্থান গুলোর সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখ পূর্বক প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে এলাকার মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তিনি  বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে এলাকার মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে

খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, বিষয়টি জানার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছি এবং ঘটনাস্থল দেখভালের জন্য লোকজন প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের সার্বক্ষণিক বাঁধের দিকে লক্ষ্য রাখতে এবং জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।

উল্লেখ‌্য, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব‌্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে যেকোনো মুহূর্তে বাঁধভেঙে ৫ টি গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এছাড়া কয়রার উপজেলার পাউবোর ১৫৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১ কিলোমিটার ঝুঁকিতে আছে। এরমধ্যে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন সময় ঝুঁকিপূর্ণ এই বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে। সবমিলিয়ে করোনা ও ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে কয়রাবাসীর। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর