আম পরিচর্যা নিয়ে বিপাকে চাষিরা, ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা

, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 13:12:26

‘আমের আনা মাছের পাই, টিকলে পরে কে কত খাই’ চিরায়ত এ প্রবাদ মেনে রাজশাহীর আম চাষিরা এখন গাছে আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। গুটি ভরা গাছের সঠিক পরিচর্যা এনে দিতে পারে বাম্পার ফলন। কিন্তু সেখানেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব!

করোনা প্রতিরোধে চলা লকডাউনে জেলা সদর থেকে গ্রাম পর্যায়েও এখন প্রকট শ্রমিক সংকট। স্থানীয় বাজারে দোকান-পাট বন্ধ থাকায় মিলছে না সার-কীটনাশকও। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমের পরিচর্যা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহীর কৃষকরা।

ফল গবেষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গাছে এবার ভালো মুকুল এসেছিল। আগাম মুকুল আসা গাছগুলোতে এখন আমের কড়ালি (গুটি)। আর দেরিতে মুকুল আসা গাছে ‘মোটর দানা গুটি’। এ দুই পর্যায়েই কীটনাশক স্প্রে করা জরুরি। যেহেতু বৃষ্টি নেই, তাই গাছের গোড়ায় পানি এবং বিভিন্ন প্রকারের সার দিতে হবে। তা না হলে আমের ফলন বিপর্যয় হতে পারে।

তবে কৃষকরা বলছেন, লকডাউন চললেও কৃষি উপকরণ সরবরাহ চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কিন্তু স্থানীয়ভাবে এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সার-কীটনাশকের দোকানও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তবে দেন-দরবার করে কীটনাশক ও সার মিললেও পরিচর্যায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে শ্রমিক সংকট।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা জানা যায়, জেলার পুঠিয়া, মোহনপুর, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় এবার ৮৫ ভাগ আম গাছে ভালো মুকুল এসেছিল। কিছুটা কম হলেও তানোর ও গোদাগাড়ীতেও গাছে মুকুল ছিল। মুকুল হওয়ার সময় থেকে টানা খরায় এখন ঝরে পড়ছে গুটি।

এখন দরকার গাছের যত্ন, ছবি: বার্তা২৪.কম

পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া গ্রামের আমচাষি রইছ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে মোবাইল ফোনে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, গুটি তো ভালোই ছিল। কিন্তু ব্যাপক হারে ঝরে পড়ছে। একটু বড় হয়ে ওঠা গুটিগুলোতে ছত্রাক লেগে খসে পড়ছে, গাছে পোকাও খুব। খরার কারণে এমন ক্ষতি হচ্ছে। এখন বৃষ্টি হলে ভালো হতো, এতো বেশি পরিচর্যা করতে হতো না।

কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা দুই/তিনটি কীটনাশকের নাম বলে দিয়েছেন। তিনদিন পর পর স্প্রে করতে হবে। কিন্তু ইউনিয়নের বাজারে কীটনাশক পাচ্ছি না। উপজেলা সদরের বাজারে গিয়েও দোকান বন্ধ। দোকান মালিককে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে কিছু কীটনাশক কিনেছি। এখন অন্তত ১৫ জন শ্রমিক লাগবে, কিন্তু পাচ্ছি না। নিজে এবং ভাইদের নিয়ে যতটুকু পারছি করছি।

এখন দরকার গাছের যত্ন, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাঘার আড়ানী পাঁচপাড়া গ্রামের চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, খরায় গাছ থেকে ব্যাপক হারে গুটি ঝরে যাচ্ছে। বাগানে সেচ দিচ্ছি, সারও দিয়েছি। কিন্তু স্প্রে করার শ্রমিক মিলছে না। গুটি ঝরা না বন্ধ হলে ফলন হবে না। বাগান ইজারা নেওয়ার টাকাও উঠবে না।

মোহনপুরের স্থানীয় সাংবাদিক মোস্তফা কামাল জানান, করোনা প্রতিরোধে পৌর মেয়র বাজারের সব দোকানই বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষি উপকরণ সংকটে রয়েছেন চাষিরা। আম গাছে গুঁটি ঝরে যাচ্ছে। যত্ন নিতে পারছেন না। কৃষকরা তাদের কাছে প্রায়ই সার-কীটনাশক না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।

চারঘাটের স্থানীয় সাংবাদিক এ কে আজাদ সনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক সংকট রয়েছে। বড় বাগানে একসঙ্গে ১২/১৫ জন মিলে কাজ করতে হয়। যেটা এখন করা সম্ভব হচ্ছে না। সার-কীটনাশক পাওয়া গেলেও তা খুব অপ্রতুল। ফলে বাগান পরিচর্যা নিয়ে বিপাকে পড়ার বিষয়টি চাষিরা তাদের জানাচ্ছেন।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ড. আলীম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, খরার কারণে গুটি ঝরে পড়া, পোকা ও ছত্রাক হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়ার সময় পরিচর্যা বেশি প্রয়োজন। এখন গুটি ও পাতায় স্প্রে এবং গোড়ায় সার, পানি দিতে হবে।

শ্রমিকের অভাবে নিজেরাই গাছের যত্ন নিচ্ছেন চাষিরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

তিনি বলেন, চাষিরা প্রায়ই ফোন করে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। আমরা তাদের মোবাইল ফোনে পরামর্শ দিচ্ছি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, সার-কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত রাখার কথা। সেটার ব্যত্যয় ঘটলে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।

রাজশাহী কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমবাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৫৭৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন।

অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, জেলায় কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যদি কেউ সার-কীটনাশক না পেয়ে থাকেন, তবে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা বা জেলা অফিসেও মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা কৃষি উপকরণ নিশ্চিত করব।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর