করোনায় সবজিতে স্বস্তি, আতংক চাল-ডালে

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-23 16:28:51

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে রংপুরের কাঁচা-বাজারগুলোতে কমেছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ। এতে বেড়েছে জরুরি খাদ্য পণ্যের দাম। তবে স্বস্তি মিলছে সবজিতে। সরবরাহ কম হলেও নতুন করে বাড়েনি সবজির দাম।

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে রংপুর মহানগরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য কিনতে ক্রেতা সাধারণে ভিড়। নিরাপদ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব অমান্য করেই বেশির ভাগ বাজারে চলছে বেচাকেনা।

ক্রেতারা বলছেন, চাল-ডাল, তেল-আটাসহ যে পণ্যগুলোর চাহিদা বেশি, সেগুলোর দাম বেড়েছে। শুধু স্বাভাবিক রয়েছে
শাক-সবজির দাম।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশেই পরিবহন সংকট চলছে। একারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর সরবরাহ ঠিক মতো হচ্ছে না। এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। তবে খুব বেশি দাম বাড়েনি বলে জানান তারা।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, গত সপ্তাহেও খোলা বাজারে ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে খোলা আটা বিক্রি হয়েছে। এখন তা কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডাল গত সপ্তাহে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, তা এখন বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি হয়েছে। বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর ছোট দানার মসুরের ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। সাত দিন আগে
এই ডাল কেজি প্রতি ১০ টাকা কম ছিল।

এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি এবং ওএমএসের খাদ্য পণ্য চাল, ডাল, তেল, আটা, পেঁয়াজ খোলা বাজারে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি অব্যাহত থাকলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

করোনায় সবজিতে স্বস্তি, আতংক চাল-ডালে
মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা

মসুর ডাল ও আটার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সিটি বাজারের ব্যবসায়ী শাহীনুর রহমান বলেন, খোলা বাজারে ডাল-আটা আর বাজারের ডাল আর আটার মধ্যে তফাৎ আছে। তাছাড়া পাইকারি বাজারে ডাল ও আটার দাম বেড়ে গেছে। আগের মতো সরবরাহ নেই। এখন বাড়তি দামে কেনার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এদিকে, চালের বাজারে গত এক সপ্তাহে দাম বাড়েনি। বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি এবং স্বর্ণ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম না বাড়লেও করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিকে বাজারে এর প্রভাব পড়েছিল। তখন বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা,পাইজাম ও লতা ৪২ থেকে ৪৮ টাকা এবং স্বর্ণা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু এখন তা প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি।

চালের দামের বিষয়ে বদরগঞ্জ রোডের টার্মিনাল কাঁচা বাজারের চাল ব্যবসায়ী সাহেব আলী জানান, চালের দাম এখন নতুন করে আর বাড়ছে না। যা বাড়ার তা আগেই বেড়ে গেছে। তবে এখন চালের সরবরাহ কম। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর চাল পাওয়াই যাচ্ছে না।

চাল-ডালের দামে অস্বস্তি থাকলেও করোনা আতঙ্কের মধ্যে সবজির দাম নতুন করে বাড়েনি। তবে বাজারে নতুন আসা সজনের ডাটা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। অবশ্য এই সবজি বাদে অন্যসব সবজি সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।

বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে একই দামে। প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পাকা টমেটো ২৫ থেকে ৪০ টাকা ও শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গাজর ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা। বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার এমন রয়েছে। তবে কিছুটা দাম কমেছে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের। আর রসুন ও আদার দামে এখনও বেশ চড়া। আমদানি করা রসুন ১৭০-১৮০ এবং দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা।

করোনায় সবজিতে স্বস্তি, আতংক চাল-ডালে
করোনায় সবজিতে স্বস্তি

সবজির পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বয়লার মুরগি ও ডিমের দামে। ১২০-এ উঠে যাওয়া ডিমের ডজন এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। তবে খামারে ডিম ও মুরগির দাম আরো কম।

নগরীর শাপলা চত্বর খান বহুমুখী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আনাম মিয়া বলেন, সবজির গাড়ি এখন অনেক কম আসছে। তারপরও বাজারে সবজির ঘাটতি নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সবজির দাম বাড়বে না। বরং দাম আরও কমবে।

এদিকে মাছের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকায়। নলা (ছোট রুই) মাছ ১৬০-১৮০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার আমজাদ হোসেন বলেন, করোনা নিয়ে এখন সবাই আতঙ্কে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম বাড়ায় আরও বেশি আতঙ্কের। এখন চাল ও ডালের যে দাম, তা কিছুতেই স্বাভাবিক নয়।

এদিকে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে যাতে ব্যবসায়ীরা বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে, সেজন্য বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকারও বাজারে নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করছে বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর