সিলেটে কণ্ঠশিল্পী সোনিয়ার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য!

সিলেট, জাতীয়

নূর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:42:05

সিলেট: সোনিয়া সুলতানা, বয়স মাত্র ২২ বছর। সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অল্পদিনে পরিচিতি পাওয়া শিল্পী। মূল দখল ছিল বাউল গানে। সম্প্রতি পেট্রোলের আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। তবে তার মৃত্যু ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। কারণ গোপনে ময়না তদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। গত ৪ আগস্ট মারা যান কণ্ঠশিল্পী সোনিয়া সুলতানা।

স্বামী সাহেদুল ইসলাম শিপলু ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘বিয়ের পর সোনিয়াকে নিয়ে আমি ভাড়া বাসায় থাকতাম। তবে তার চলাফেরা ভালো লাগতো না বলে আমি নিজের বাড়ি চলে আসি। একদিন সে আমাদের বাড়িতে এসে জানতে চায় আমি বাসায় আসবো কিনা? আমি বলেছিলাম, ‘না’, তুমি আগে ঠিক হও, ভালোভাবে চলাফেরা কর তারপর বাসায় আসবো। এই কথার পর সোনিয়া ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। এর দু’এক মিনিট পর ঘরের মধ্যে আমি তার চিৎকার শুনতে পাই। পরে দরজা খুলে দেখি সোনিয়ার শরীরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তখন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি।’

জানা গেছে, সিলেট নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ডের ছড়ারপারে সুগন্ধা ১২ নং বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুলাই। ওই বাড়িতে বসবাস করেন সাহেদুল ইসলাম শিপলুর পরিবার। তবে তিনি সোনিয়াকে নিয়ে সুবিদবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দিলে গত ২০ জুলাই সুবিদবাজারের বাসা ছেড়ে শিপলু বাবা-মার কাছে ছড়ারপারের বাড়িতে চলে আসেন। এর ৫ দিন পর সোনিয়া ছড়ারপারের বাড়িতে এসে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দুই পরিবারের সম্মতি ছাড়া সিলেটের আদালতে গিয়ে দু’জন বিয়ে করেন।

এদিকে, ময়না তদন্ত ছাড়া সোনিয়ার লাশ দাফন করায় তার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কাকলী নামের সোনিয়ার এক বান্ধবী জানান, দগ্ধ সোনিয়াকে সিলেটে রাখলে ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পরবে, তাই তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো হয়। আবার ঢাকা মেডিকেলে মারা গেলে ঝামেলার সৃষ্টি হবে ভেবে, গত ৪ আগস্ট ভোরে তাকে সিলেটে ফেরত আনা হচ্ছিল। কিন্তু পথেই তার মৃত্যু হয়। এর পিছনে রহস্য কী?’

তিনি দাবি করেন, ‘সোনিয়ার পরিবারকে লোভ দেখিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সোনিয়ার বাবা মজিুবর রহমান স্বীকার করেছেন গত ৪ আগস্ট ভোরে সোনিয়াকে নিয়ে সিলেটে ফেরার পথে তার মৃত্যু হয় এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই সোনিয়াকে দাফন করা হয়।’

জানা গেছে, সোনিয়াদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া আলীনগর গ্রামে। বাবা মো. মজিবুর রহমান পেশায় সিএনজি অটোরিক্সা চালক। তারা দীর্ঘদিন থেকে নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় থাকেন।

সোনিয়ার বাবা মজিবুর রহমান বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘এটি ছিল তার মেয়ের তৃতীয় বিয়ে। সব বিয়েই সোনিয়া নিজের ইচ্ছায় করেছিল। কণা নামে চার বছর বয়সী তার একটি মেয়ে আছে। মেয়েটি শিশু শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। সোনিয়া এবং তার মেয়ে গান করতেন। সর্বশেষ শিপলুর সাথে বিয়ে হয়েছিল সোনিয়ার।’

কাকলী অ্যানি নামে সিলেটের এক সংগীতশিল্পী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘কী কারণে সোনিয়া নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যা করেছে তা অস্পষ্ট। দুই পরিবারের নিরবতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে নাকি সে নিজেই আত্মহত্যা করেছে তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানাচ্ছি।’

সোনিয়ার এক ঘনিষ্ঠজন জানান, স্বামী শিপলু বেকার ছিলেন। তাকে নিয়েই জীবন পার করতে চেয়েছিলেন সোনিয়া। স্টেজ শো করে যা টাকা কামাতেন, তা স্বামীর হাতেই তুলে দিতেন।

শিপলুর বাবা শামসুল আলম ডিসকো দাবি করেন, ‘আমার ছেলেকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল।’ তবে নিজের বাসায় এত বড় একটি ঘটনা ঘটলেও কেন পুলিশকে জানাননি- এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান।

সিলেটের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘এসব ঘটনায় প্রথমত মেয়ের বাবা বা পরিবারের কেউ বাদী হয়ে মামলা করবেন। না হলে তৃতীয় পক্ষের কেউ বাদী হতে পারেন। এছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী কোথাও আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হলে, জানা মাত্রই পুলিশ এটি আমলে নিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করবে। আইনে পুলিশের দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি পুলিশেরই দায়িত্ব।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। তবে এখানে সোনিয়ার বাবার নিরবতা রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। সোনিয়ার আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের যে কেউ আদালতে আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর