সাভার-আশুলিয়া-ধামরাইয়ের রাস্তাঘাটে, পাড়া-মহল্লার অলিতে গলিতে রাতারাতি বাঁশ দিয়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেকপোস্ট সাজিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকাকে।
হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা ‘এই প্রশাসনের’ দাপটে তটস্থ হয়ে পড়েছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ।
মূলত ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার নাম করে পাড়ার ছিঁচকে চোর, সন্ত্রাসীরা গোটা এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তারা স্থানীয়দের উপর খবরদারি চালাচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করছে। কোথাও বা শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি। আর এখন এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের হুঁশিয়ারিতে ভয় পাচ্ছে না তারা। ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাড়া-মহল্লার এই ছিঁচকে চোর-সন্ত্রাসীর গ্রুপটি।
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা বলছেন, সচেতনতা ভালো। তবে সেটার নাম করে বখাটে যুবকদের হাতে নাজেহাল, তাদের খবরদারি এলাকায় ভুল বার্তা দিচ্ছে। হেনস্তার শিকার হয়েও অনেকে প্রতিকার পাচ্ছেন না।
এদিকে কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি চ্যানেলের প্রযোজনা বিভাগে কর্মরত সিনিয়র একজন প্রযোজক বলেন, ‘আমার বাসা সাভারের পৌর এলাকা সংলগ্ন লালটেকে। এ এলাকার প্রবেশমুখের কাছেই হঠাৎ করে দেখি বাঁশ পেতে সাদা কাগজে কম্পোজ করে লেখা হয়েছে লকডাউন। সচেতনতা দেখে প্রথম প্রথম ভালোই লেগেছিল। তবে এখন দেখছি ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার নামে এলাকায় এলাকায় চাঁদাবাজি ও খবরদারি চালানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এরা আসলে বাঁশ দিয়ে চেকপোস্ট বসানো এবং সাবান আর পানি সংগ্রহের নামে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চাঁদা তুলছে। এছাড়া জানিয়েছে, তারা নাকি ৩ জন করে ডিউটি করে। এ কারণে তাদের জন্য চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে আমি গড়িমসি করায় রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমাকে আটকে নাজেহাল করেছে তারা। ওই সময় তারা জানায় অতো রাতে মহল্লায় প্রবেশ করা যাবে না। আমি গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিলেও আমাকে তারা ওই স্থানে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে। পরে বাড়ি থেকে এলাকার গণ্যমান্য লোকদের সেখানে ডেকে এনে আমাকে মুক্ত করা হয়।’
এটা শুধু আমার একার ক্ষেত্রে নয়, কমবেশি সবাই এমন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন- যোগ করেন বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত ওই ব্যক্তি।
এদিকে ধামসোনা ৯নং ওয়ার্ডের একটি রাইস মিলের সামনেও রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে কতিপয় যুবক পাহারা দিচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে ঘর ছেড়ে তারা কেন বাইরে জিজ্ঞাসা করতেই সেখানকার বখাটেদের হাতে আশরাফ হোসেন নামে স্থানীয় এক যুবককে নাজেহাল হতে হয়।
‘নিউজ গার্ডেন’ নামে স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, দিলখুশাবাগ মহল্লায় বসবাস করেন তিনি। সেখানে চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে একই ভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে কিছু বখাটে। গোটা এলাকা অবরুদ্ধ করে নাজেহাল করা হচ্ছে নিরীহ বাসিন্দাদের। জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্সকেও আটকে দিচ্ছে তারা।
সৈয়দ তামিম হোসেন নামে একজন জানান, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ঢাকা জেলার অস্থায়ী জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোর পাশের রাস্তাটি বাঁশ ও কাটা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে ৷ এছাড়া ভাগলপুর সিরামিকস বাজারের পাশের বিভিন্ন গলির রাস্তাগুলো বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে ৷
কিছু লাঠিয়াল বাহিনী অতি উৎসাহী হয়ে রাস্তায় টহল দিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে।
আশুলিয়া থেকে জাকির হোসেন নামে একজন জানান, তার এলাকাতে বাঁশ ফেলে সন্ত্রাসীরা জুয়া খেলছে। এলাকার পথচারীদের অযাচিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বিশেষ করে নারীদেরকে উত্ত্যক্ত করছে।
তিনি বলেন, লকডাউন মানে রাস্তায় ব্যারিকেড নয়। নিজেকে ঘরের ভেতরে সুরক্ষিত রাখা। এটা তাদের বোঝানো যাচ্ছে না।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান জুমন বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। আমি নিজের ফেসবুক পেজ থেকে সবাইকে সতর্ক করেছি। এখন দেখছি, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দেশে আইন আছে। প্রশাসন আছে।’
অতি উৎসাহী হয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।