মিরসরাইয়ে যত্রতত্র গভীর নলকূপ, কমছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর

, জাতীয়

মোহাম্মদ ইউসুফ, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) | 2023-08-27 14:24:19

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ। এতে করে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই সাধারণ নলকূপ থেকে পানি কম উত্তোলন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্টসহ বিভিন্ন মাছের প্রকল্পে উৎপাদিত মাছ জীবিত রেখে ড্রামে করে আড়তে নেওয়ার জন্য এ নলকূপগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সোনাপাহাড়ে অবস্থিত বিএসআরএম কারখানায় একাধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে কয়েকটি ইউনিয়নে নেমে গেছে পানির স্তর।

জানা গেছে, উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজার থেকে আজমপুর পর্যন্ত প্রায় ১০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এদের মধ্যে আজমপুর বাজারে তিনটি, জোরারগঞ্জ ট্রেক্সটাইলের পাশে একটি, দেওয়ানপুরে একটি, বিশুমিয়ারহাটে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। প্রতিটি গভীর নলকূপ মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের পাশে অবস্থিত। নলকূপগুলো বিভিন্ন ধরনের বেড়া দিয়ে ডেকে রাখা হয়।

স্থানীয়রা জানান, একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন ভোরে স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে ড্রামে পানি ভর্তি করে সোডিয়াম কার্বনেট পার অক্সিহাইড্রেট জাতীয় ঔষধ মিশ্রণ করে। পরে পানি ভর্তি ড্রামগুলো মিনি পিক আপে করে মুহুরী প্রজেক্টে উৎপাদিত মাছ তাজা রাখতে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মিনি পিক আপে ২৬টি ড্রাম থাকে। দৈনিক ৭০ থেকে ৮০টি পিক-আপ ভর্তি পানি মুহুরী প্রজেক্ট নিয়ে যাওয়া হয়। পানি ভর্তি প্রতিটি পিক-আপের ওজন হয় প্রায় ১০ টন। যাতে কয়েক হাজার লিটার পানি থাকে।

রাসায়নিক মিশ্রিত পানি ভর্তি পিক-আপগুলো যাওয়ার সময় সড়ক ভিজে যায়। ফলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। সড়কের উপর স্তরের বিটুমিনের গুণগত মান নষ্ট হয়ে অল্প বৃষ্টিতে সড়ক ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এদিকে, উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে বিএসআরএম কারখানায় বসানো হয়েছে অনেকগুলো গভীর নলকূপ। কারখানায় উৎপাদিত ব্লেড তৈরিতে প্রচুর পরিমাণের পানির প্রয়োজন হয়। ফেনী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করার জন্য বিএসআরএম কারাখানাকে বলা হলেও তারা এ বিষয়ে শুনছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মার্চ মাসে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় মিটিংয়ে এ বিষয়ে মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিএসআরএমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিলেও তারা এখনো এর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিএসআরএমের পানি উত্তোলনের কারণে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন, বারইয়ারহাট পৌরসভা (আংশিক), হিঙ্গুলী ইউনিয়ন (আংশিক), দুর্গাপুর ইউনিয়নে (আংশিক) শ্যালো টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে ১৯৮৬ সালে একটি অধ্যাদেশ জারি হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেই অধ্যাদেশ স্থগিত করে দেওয়া হয়। যা ছিল অবৈধ। ১৯৮৬ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একটি গভীর নলকূপ থেকে আরেকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা যেত ২৫০০ ফুট দূরত্বে। কিন্তু সেই আইনের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। ফলে ভূ-গর্ভের পানি স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সাধারণ নলকূপ থেকে পানি কম উত্তোলন হচ্ছে।

কৃষি কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনা আইন-১৭ নামে একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছেন মন্ত্রিসভা। সেই আইন অনুযায়ী উপজেলা পরিষদের লাইসেন্স ছাড়া গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাবে না। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা কমিটি অনুসন্ধান করে নলকূপ স্থাপনের লাইন্সেস দেবেন।

উপজেলা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফোরামের সভাপতি ডা. জামশেদ আলম জানান, যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে ভবিষ্যতে উপজেলাবাসী বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়বে। নলকূপের পানি নির্ভর কৃষি জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়বে। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন জানান, গভীর নলকূপের আশপাশে সাধারণ নলকূপ থাকলে পানি কম উত্তোলন হবে। কারণ গভীর নলকূপের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এ বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে শিগগিরই গভীর নলকূপ স্থাপনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের পাশে এভাবে নলকূপ স্থাপন করে পানি বিক্রি করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর