‘করোনায় আক্রান্ত না হয়েই মরে যাচ্ছি’

, জাতীয়

মাহমুদ আল হাসান (রাফিন), ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী | 2023-08-30 14:32:33

প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। বন্ধ রয়েছে যাবতীয় যান চলাচল। খোলা হচ্ছে না দোকানপাটসহ ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। অদৃশ্য এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে সরকার থেকে মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আর বাইরেও চলছে কড়াকড়ি বিধি নিষেধ। এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হওয়া তিস্তাপাড়ের জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহা বিপাকে।

রোববার (১২ এপ্রিল) দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় গিয়ে এমনটাই চোখে পড়ে। সেখানকার অসহায় দরিদ্র জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের সংসারে করোনায় দুর্দিন চলছে। আগের মতো বিকিকিনি না থাকায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ এলাকার মাছ নিয়ে বসে আছেন শুশীল রায়। কথা হলে চোখে মুখে হতাশা নিয়ে প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাছ বিক্রি করি যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের সব খরচ চলে। কিন্তু করোনার কারণে অসহায় হয়ে পড়েছি। এমন যদি আর কিছুদিন থাকে, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে। বেচা-বিক্রি নাই। বউ বাচ্চা আর সংসার নিয়ে বড় বে-কায়দায় আছি।’

তার পাশে বসেই ক্রেতার অপেক্ষায় আরেক মাছ বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম। ডিমলা উপজেলার বাগেরপুল এলাকা থেকে ব্যারেজের কাছে এসেছেন। কপালে হাত দিয়ে বসে থাকা এই ব্যবসায়ী জানান, ‘চাউল কিনে ভাত খেতে হয়। বাড়ি থেকে বের না হলে কোনো উপায় নাই। এলাকার মেম্বাররা তো ছোট ব্যবসায়ীদের ত্রাণ দেয় না। যার ১৩-১৪ বিঘা জমি আছে, তারাই মেম্বারের কাছে ত্রাণের চাউল পায়। মাছ নিয়ে বসে আছি, ক্রেতা তো দূরের কথা মাছিও নাই।’

শফিকুল বলেন, আগে বাইম মাছ বিক্রি করতাম প্রতি কেজি ৫০০ টাকা। আর এখন কাস্টমরই নাই। ৩০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে না। কম দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। ৬০০ টাকার টেংরা মাছেরও একই অবস্থা।

ব্যবসার এই মন্দা পরিস্থিতি শুধু মাছ বিক্রেতাদের নয়। এই এলাকার জেলেরাও রয়েছেন ভীষণ কষ্টে। নদী আর খাল বিল চষে কিছু মাছ জুটলেও মিলছে না দাম। এমনটাই জানালেন তিস্তা নদীতে মাছ ধরা জেলে কদম আলী।

বার্তা২৪.কমকে এই জেলে জানান, আগের মতো নদীতে মাছ নেই। সারাদিন কষ্ট করে যা মাছ পাই, তাও বিক্রি হয় না। আগের মত লোকজনের যাতায়াত নাই। মাছের চাহিদাও নেই। এভাবে চললে মাঠে মারা যেতে হবে।

আরেক জেলে সোলায়মান হাত উঁচিয়ে ক্ষোভের সুরে জানালেন, কপাল পুড়লে যা হয়। করোনায় আমাদের কপাল পুড়ছে। শুনছি করোনা ধরলে মানুষ মরে। এখন তো করোনা অসুখ না হয়েই আমরা মরে যাচ্ছি। কেউ তো পাশে আসতেছে না। শুধু সরকার ত্রাণ দিচ্ছে, কিন্তু তা চোখে আর দেখি না।'

এদিকে করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র আয়ের এসব মানুষদের টিকে থাকাই যেন অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের অন্যদের সাহায্যের আশায় আছেন তারা।

ডিমলা উপজেলার ৭নং খালিশা চাপানী ইউ.পি. চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, 'আগের থেকে জেলে পরিবার কমেছে এখন সবাই ভুট্টা চাষ করছে এবং সচ্ছল। আমরা ইতিমধ্যে অনেক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। নতুন বরাদ্দ আসলে তিস্তা নদী কেন্দ্রিক জীবন নির্বাহ করা দারিদ্র্য ও অসহায় জেলে ও ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর