ঢাকার ভোটার না হলে ত্রাণ মিলছে না

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 00:26:50

দিন মজুরদের কাজ বন্ধ, বেকার হয়ে পড়েছে মোটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিকরাও। করোনার বাহক হতে পারে ভয়ে ছোটা বুয়াদের গৃহে প্রবেশ বারণ। আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেল বয়, দোকানের কর্মচারীসহ দিনমজুররা চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন।

অনেকের ঘরে খাবার নেই, পাচ্ছেন না ত্রাণ সহায়তা। ত্রাণ চাইতে গেলে প্রথমে দেখতে চাওয়া হচ্ছে এনআইডি। যদি ঢাকার ভোটার হয় তবে বিবেচনা করা হচ্ছে ত্রাণের জন্য। না হলে বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে। এই শ্রেণির শ্রমিকরা অনেকেই ঢাকায় ভাসমান বলা চলে। অনেকে ঢাকায় আসেন এক-দেড়মাস কাজ করে বাড়ি ফিরে যান। আবার কেউ কেউ ঢাকায় লম্বা সময় ধরে থাকলেও ভোটার নিজ এলাকায়। এই লোকগুলোই সবচেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে।

যারা না পারছেন কারো কাছে হাত পাততে না পারছেন খাবার জোগাড় করতে। নড়াইলের কালিয়া গ্রামের রজ্জব আলী ঢাকার মিরপুর-১ এলাকায় থাকেন। ঢাকার ভোটার না হওয়ায় ত্রাণ পাননি। বরগুনার বেতাগী গ্রামের রিকশা চালক হুমায়ুন কবীর থাকেন ঢাকার পল্লবী এলাকায়। তিনিও অভিযোগ করেছেন ত্রাণ না পাওয়ার।

ভোলার বাসিন্দা মোটর শ্রমিক কামাল হোসেন থাকেন দুয়ারীপাড়া এলাকায়। কাজ বন্ধ তাই স্থানীয় নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন ত্রাণের জন্য। তাকেও ফিরিয়ে দিয়েছেন ঢাকার ভোটার না হওয়ায়। গাড়ি বন্ধ থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে।

রাশেদ মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের দুয়ারীপাড়ায় তিনদিন আগে এমপির পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্ধেকের বেশি লোক ত্রাণ পায়নি। লোকজন খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে বারেকমোল্লা বস্তির বাসিন্দাদের অবস্থা খুবই করুণ। এখানে অল্প সংখ্যক লোক রয়েছে যারা ঢাকার ভোটার। তারাও অনেকে পাননি। অন্যদের কি অবস্থা সহজেই বুঝতে পারছেন।

কর্মহীন রিকশাচালক

রূপনগর আবাসিকের ৯ নম্বর রোডের বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক তাইজুল ইসলামের কাজ বন্ধ ১২ দিন ধরে। তার স্ত্রী ছোটা বুয়ার কাজ করেন বাসা-বাড়িতে, তার কাজও বন্ধ। তাদের সংসারের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বাসায় কোনো খাবার নেই। পাশে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে এই খবরে গিয়েছিলেন। ঢাকার ভোটার না হওয়ায় তাকে দেওয়া হয়নি।

ঢাকা শহরে কয়েক কোটি লোকের বাস, এখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দৈনিক ৫’শ লোককে ত্রাণ দিচ্ছে। সিটি করপোরেশন, অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তি উদ্যোগে বিক্ষিপ্তভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু তার সংখ্যা কতো। ফেসবুকে ত্রাণের বহর দেখা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য মনে করছে অনাহারী মানুষগুলো। অনেকে গ্রামে ফিরতে চান, গাড়ি বন্ধ থাকায় ফিরতে পারছেন না।

অন্যদিকে ঢাকার ভোটাররাও দাবি করেছেন তারা অনেকেই সহায়তা পাচ্ছেন না। যা দেওয়া হচ্ছে সংখ্যায় প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। রাজধানীর সবুজবাগ থানাধীন বাসাবো-মাদারটেক (ওয়ার্ড-৪) এলাকার বাসিন্দা আমিনুল কবীর সুমন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের এই ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬০ হাজার, আর লোক সংখ্যা প্রায় ২ লাখের মতো। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের লোকের সংখ্যা বেশি। এখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সম্ভবত তিন-চার শত লোককে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর পক্ষ থেকে ১ হাজার লোকের তালিকা করা হয়েছে সবে মাত্র। আর কিছু ব্যক্তি উদ্যোগে (ক্ষুদ্র আকারে) ত্রাণ এসেছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন অবস্থাটা কি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আমরা স্থানীয় এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। তিনি বলেছেন তার কিছুই করার নেই। সরকার থেকে যে বরাদ্দ এসেছে সেটাই দিচ্ছেন।

বিদায়ী কাউন্সিলর গোলাম হোসেন এখনও বহাল। আর বর্তমান কাউন্সিল জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেবেন ১৫ মে। গোলাম হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর