মন ভালো নেই মৃৎশিল্পীদের

, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-08-21 18:17:28

‘বৈশাখে আমগর যে আয়-রোজগার অয় তা দিয়া বছরের অর্ধেকই চইলা যায়। প্রত্যেক বছরের মতো এইবারও আগে থেইকাই কাজ করছি। হাঁড়ি-পাতিল, খেলনাসহ নানা জিনিসপাতি বানাইছিলাম। কিন্তু করোনার লেইগ্যা সব কিছু শেষ হইয়া গেল। মেলাও অইত না, এইগুলা বেচাও অইত না। আমরা এহন কিরম কইরা চলমু বুঝতাছিনা।’

এক বুক হতাশা নিয়ে এভাবেই বলে যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার পালপাড়ার বাসিন্দা মৃৎশিল্পী অনিল পাল।

বৈশাখের আগের এই দিনটাতে যার বাড়ির আঙিনায় শোভা পেত রং দিয়ে নকশা আঁকা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, মাটির তৈরি বিভিন্ন প্রাণি, ফল, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও তৈজসপত্র। ব্যস্ত থাকতো শত শত পালরা। সেখানে এখন শুধুই নীরবতা। নেই মাটির তৈরি জিনিসপত্রের স্তূপ। চকচক করছে চাকের চাকাগুলোও। এমন অবস্থায় তাদের একটাই চিন্তা, কীভাবে পার করবেন এ দুঃসময়।

একই অবস্থা উপজেলার শিবগঞ্জ, মহুয়াতলা, ধামর, চকরাধাকানাই, ভালুকজান, নাওগাঁও, বেদবাড়ী, রামনগর গ্রামের দুই হাজার পাল সম্প্রদায়ের পরিবারের সদস্যের। এ কারণে মন ভালো নেই মৃৎশিল্পী কারোরই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ করাসহ এবারের বৈশাখী মেলাও বাতিল ঘোষণা করেছে সরকার। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের আগমন উপলক্ষে পাল সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করলেও এবার নেই কোনো আয়োজন। নেই কোনো মেলা। ফলে মাটির তৈরি এসব জিনিস বিক্রি করতে পারবেন না কারিগররা।

এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের মাঝে। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতার দাবি তাদের।

উপজেলার ভালুকজান এলাকার গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল বলেন, ‘অভাব অনটনের মধ্যেও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছে। আগে হাঁড়ি-পাতিল ও অন্য সব জিনিসপত্র তৈরির জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত এঁটেল মাটি তাদের গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিনামূল্যে আনা যেত। এখন সেই মাটি টাকা দিয়ে কিনে ভ্যানে করে আনতে হয়। এরপর মাটির জিনিস তৈরি করে রোদে শুকানো হয়। আগুনে পুড়িয়ে সেগুলো জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কোনো মেলা হচ্ছে না। তাই এসব মাটির জিনিস আমরা বিক্রি করতে পারছি না। আমরা অনেক কষ্টে আছি। সরকারিভাবে সাহায্য না পেলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।’

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘পাল সম্প্রদায়ের লোকজন আগে থেকেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। এদিকে আবার করোনার প্রভাব যোগ হয়েছে। আমরা চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে তাদেরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ছিদ্দিক জানান, ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ভিত্তিক ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এরপরও পালদের খোঁজ নিয়ে ত্রাণের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর