দূষণমুক্ত-জনশূন্য ঢাকা নগরীর আজ ২০ দিন!

, জাতীয়

ফাতিমা তুজ জোহরা, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 06:25:56

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের যান চলাচল, কারখানা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা হয়। এতে ব্যস্ত নগরী ঢাকা হয়ে পড়ে স্থবির। যানচলাচল নেই, কন্সট্রাকশনের কাজ থেমে গেছে, নির্মাণাধীন ফাঁকা দালান-কোঠায় পশু-পাখির অবাধ বিচরণ, দিনভর পাখির কলতান, আর ঝকঝকে নীলাভ আকাশে ধরা দিচ্ছে অন্য রূপ। করোনার প্রভাবে জনমনে যখন অস্থিরতা তখন ঢাকার বায়ুদূষণের হার কমছে আশানুরূপ ভাবে।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকার বায়ু মানের সূচক ছিল ১৯০ স্কোর। ঠিক একদিন আগে রোববার সকালে বায়ু মানের সূচক ছিল ৭৩ স্কোরে। গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বায়ু মানের সূচকের মান ১০৯, ১৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ পর্যন্ত অবস্থানে ছিল।

নতুন জীবন পেয়েছে তিলোত্তমা নগরীর প্রকৃতি

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স কী?

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স হলো বায়ু মানের সূচক। সূচক অনুযায়ী ৫০ এর নিচে স্কোর থাকার অর্থ হলো বাতাসের মান ভালো। সূচকে ৫১ থেকে ১০০ স্কোরের মধ্যে থাকলে বাতাসের মান গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেয়া হয়। একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। একিউআই স্কোর ৩০১ থেকে ৫০০ বা তারও বেশি হলে বাতাসের মান ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়। এসময় স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ প্রত্যেক নগরবাসীর জন্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। এজন্য নির্মাণ কাজ, ধুলা, যানবহনের ধোঁয়া, কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় দূষণের মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ঢাকা শহরের অতিমাত্রার দূষণের কারণ হিসেবে ইটাভাটাকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী ইটভাটাগুলো অপসারণ করা সত্ত্বেও কমেনি বায়ুদূষণ বলে জানান পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাসচিব ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন।

দূষণমুক্ত রাজধানীর আকাশ

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকার আশেপাশের ইট ভাটাগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল এটা দূষণের মূল কারণ। পরে দেখা যায়, শিল্পকারখানা, কন্সট্রাকশনের কাজ এবং যানবাহন আসলে বড় ধরনের প্রভাব রাখে দূষণে। সেক্ষেত্রে যানবহন ও শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূষণের মাত্রা কমে গেছে। 

২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীর বায়ু দূষণের ১০ দশমিক ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী এ কালো ধোঁয়া। ২০০২ সালে ফিটনেস বিহীন বেবিট্যাক্সিসহ পুরাতন যানবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ঢাকার বায়ুতে বিশাল এক পরিবর্তন আসে। বায়ু দূষণের মাত্রা ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।

এ প্রসঙ্গে ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে হলে, কারখানা বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া মানুষের চলাচলে নগরীর বাইরে থেকেও যানবহন আসে। পরিবেশ এবং অর্থনীতি একসঙ্গে চালু রাখতে অবশ্যই কলকারখানাগুলোকে এনভায়রনমেন্ট ফেন্ডলি ওয়েতে অপারেট করতে হবে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা এনভায়রনমেন্ট ফেন্ডলি ওয়েতে অপারেট করে না। এখনও পুরনো গাড়িগুলো অপসারণ করে এবং কন্সট্রাকশনের যেসব কাজ হচ্ছে–তা যদি পরিবেশ অধিদফতরের গাইডলাইন অনুযায়ী চালিয়ে যায় তাহলে দূষণের মাত্রা কমবে। শুধু এককভাবে পরিবেশ অধিদফতর নয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

করোনাকালে যানবাহন শূন্য রাজধানীর ফ্লাইওভার

এখন দেখা যাক সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগের এক সপ্তাহে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স কত ছিল— মার্চের ২১ তারিখ ঢাকার স্কোর ছিল ২৫৬। যা স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। যথাক্রমে মার্চের ২৫ তারিখ ২৪৭, মার্চের ২১ তারিখ ২১৪ একিউআই স্কোর, মার্চের ২০ তারিখ ২১৪ একিউআই স্কোর।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনাভাইরাসের এই বিপর্যয় আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা উন্নয়নের যে রোল মডেলে আছি সেটি সাসটেইনেবল নয়। এটি শুধু বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল নয়, গোটা বিশ্বের কনজামশন মডেলই টেকসই নয়। প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে কখনও লাভ করা যায় না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বুঝতে পারছে, স্বাস্থ্যখাত, নেচার কনজারভেশনে কম ব্যয় করে এবং অতিরিক্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচারে ব্যয় করে তাদের খুব একটা লাভ হয়নি। প্রকৃতির সঙ্গে সহবস্থান করে ভালো থাকা যাবে। 

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের বার্তা২৪.কমকে বলেন, পরিবেশের এই পরিবর্তন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। একইসঙ্গে এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আমাদের আচরণগত পরিবর্তন অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, যেখানে সেখানে থুতু-কফ-ময়লা না ফেলা এবং এর সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার বিকল্প নেই। যা আমাদের মানসিক বিকাশে সহায়ক। 

সম্প্রতি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে বিরাট পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও নিউইয়র্কের আকাশে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড আর কার্বন মনক্সাইডের মাত্রা ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর