‘আঙ্গো হেডে ভাত না থাইকলে বাঁচি থাই কিরিয়াম’

, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-09-01 11:50:09

‘কাগা, আইজ আডারো দিন কাম নাই। ঘরে খানাও নাই। যা আছিল তা হুরাই শেষ অই গেছে। অন হোলা-হাইন লই কষ্টে আছি। আঙ্গো হেডে ভাত না থাইকলে বাঁচি থাই কিরিয়াম।’

‘হুইনছি, নেতারা বলে মাইনষেরে খানা দ্যায়। আঙ্গোরে অনও কেউ দ্যায় ন। কোনো নেতা আঙ্গো খবরও লই না। ভোট আইলে হেতাগো হুরাহুরি দ্যায়া যা। ইয়ার হরে হ্যাতাগোরে আর দ্যায়া যা না। একজনরে কইছি হাশ’শ টিয়া (৫০০ টাকা) হালাত দিত, দিলে চাইল-ডাইল কিননাম।’

বিগত ১৮ দিন ধরে কাজ না থাকায় খাবারও তেমন জুটছে না। এখনো কোনো ত্রাণও পাননি। স্থানীয় ভাষায় নিজের কষ্টের কথাগুলো বলেছিলেন ৫৪ বছর বয়সী দিনমজুর রফিক উল্যাহ ধনু।

তিনি লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলা কুশাখালি ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউডগি গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়দের কাছে তিনি ধনু বয়াতি হিসেবে পরিচিত। পেশায় তিনি দিনমজুর। তার ঘরে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছেন। ছেলেটি সবার ছোট।

ধনু বয়াতি বলেন, ‘কি বলে করোনা আইছে। হেডার লাই আঙ্গো কাম বন্ধ অই গ্যাছে। ঘরের তন বাইরইলে বলে পুলিশে হিডবো। হিয়ারলাই ঘরের তন বাইরিতে ডর লাগে। খানার জোগাড় অইলে, ঘরে থাইকতে রাজি আছি। মানে তিনি শুনেছেন, ঘরের বাইরে বের হলে পুলিশ পিটাবে। খাবারের জোগাড় থাকলে তিনি ঘরে থাকতে রাজি আছেন।

ঝাউডগি গ্রামের রাস্তা, ছবি: বার্তা২৪.কম

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুশাখালির নয় নম্বর ওয়ার্ডে ঝাউডগি ও নূর খাঁ নামে দু’টি গ্রাম আছে। এ দু’টি গ্রামের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই দিনমজুর। খেতে খামারে কাজ করে সংসার চালান। করোনার কারণে তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই ঘরে বসে আছেন। এরা দিন এনে দিনে খান, এদের জমানো কোনো অর্থও নেই। ঘরে খাবার যা ছিল, গত কয়েকদিনে সব শেষের পথে। কিন্তু মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দের খাবার এলেও এখানকার দিনমজুররা কেউ পাননি। কাউকেই ত্রাণ নিয়ে এ গ্রামে প্রবেশ করতেও দেখেনি কেউ।

জানতে চাইলে ধনু বয়াতি জানান, তিনি বান্ডারি গান গাইতেন। এজন্য স্থানীয়দের কাছে তিনি বয়াতি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন আর তিনি গান করেন না। মানুষের কাজ করে তিনি সংসার চালান। ঘরে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্ট করে দিন কাটাতে হচ্ছে। ঘরে যা ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। টাকা ধার নিয়ে চাল-ডাল কিনতে হবে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক স্কুলশিক্ষক বলেন, করোন আতঙ্কে লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশেই দিনমজুররা খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু ঝাউডগি ও নূর খাঁ গ্রামে এখনো কোনো ত্রাণ আসেনি। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা কোনো স্বেচ্ছাসেবীকেও এখনো পর্যন্ত এ এলাকায় ত্রাণ নিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর