এবার নেই ঢাকের বাড়ি, ঢোলের শব্দ

, জাতীয়

জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-08-31 11:31:55

বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ যশোর। সুস্থ সংস্কৃতি লালন ও বিকাশে যশোর সব সময়ই দেশের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদযাপনে যশোর পরিণত হয় উৎসবের শহরে। কিন্তু আজ যেন অচেনা এক নববর্ষ। উৎসব নেই মানুষের মনে; নেই উল্লাস। নেই কোনো ঢাকের বাড়ি কিংবা ঢোলের শব্দ। মঞ্চগুলোতে নেই কোনো আয়োজন। সংগঠনগুলোর কার্যালয়ে চলছে সুনসান নীরবতা। পয়লা বৈশাখকে রাঙিয়ে দিতেও নেই শিল্পীদের সুর সাধনা। হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রা । সকল কিছুই কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস নামের এক ভয়ঙ্কর মরণব্যাধি।

১৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে যশোর শহরের বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, নববর্ষে সবচেয়ে বেশি উৎসবে রূপ নেয় যশোর পৌর উদ্যোনে। কিন্তু এবার গেটে তালা বন্ধ। পুরো উদ্যোন সুনসান নীরবতা। জনশূন্য এ উদ্যান একেবারেই অচেনা। করোনাভাইরাস যেন নিস্তব্ধ করে দিয়েছে সব অনন্দ। গত বছর এমন দিনে গম গম করতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এবার প্রতিষ্ঠানের দরজায় তালা। সব সময় ছোটাছুটি করে যে চেনা মুখগুলো, তাদের কেউ কোথাও নেই। কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া গেল না। ভবনের সামনের বাগান, ফুলে থাকা ফুলগুলোও যেন বিষণ্ন। চিরচেনা রাস্তাগুলো ফাঁকা।

চিরচেনা রাস্তাগুলো ফাঁকা

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বার্তা২৪.কমকে বলেন, যশোরে প্রথম ১৯৭৬ সাল থেকে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান শুরু করে উদীচী। আর ১৯৮৭ সালে চারুপীঠের আয়োজনে বাংলাদেশে প্রথম নববর্ষের শোভাযাত্রা বের হয়েছিলো। তারপর থেকে পয়লা বৈশাখে উৎসব আয়োজনের পাশাপাশি ‘নববর্ষে’র শুভেচ্ছা জানানো চিরায়ত বাংলার রীতিতে পরিণত হয়েছে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্যের নিজস্বতায় ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে ওঠা একমাত্র সার্বজনীন উৎসব। গ্রামীণ কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পয়লা বৈশাখ এখন শহরের আঙিনায় আলোকিত প্রাণের উৎসব। গ্রাম থেকে শহরে আনন্দ মুখর পরিবেশ ও নানান অনুষ্ঠানে বরণ করে নেয়ার কথা নতুন বছরকে। কিন্তু করোনা সংকুল পরিস্থিতিতে এবার এসবের কিছুই নেই। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে হচ্ছে না পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান।

এ বিষয়ে জেলা কালচারাল অফিসার হায়দার আলি বার্তা২৪.কম-কে জানান, জেলায় প্রায় ৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে যারা পয়লা বৈশাখে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে কাকডাকা ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সংগঠনগুলো নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে নতুন রঙিন পোশাক পরে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে বরণ নেয়ার শুভ সূচনা ঘটতো। কিন্তু করোনার কারণে এবার সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী সব অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, নববর্ষে এই যশোর রূপ নিতো উৎসবের শহরে। কিন্তু করোনার কারণে মানুষে মানুষে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। সব আনন্দ উচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়ে চাপিয়ে দিয়েছে একাকিত্বের যন্ত্রণা। প্রত্যেক মানুষকেই বাইরের কাজ ফেলে ঘরের মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে। তাই সরকারি নির্দেশনা অনুসারে সব ধরনের উৎসব বাতিল। ঘরোয়া পরিবেশে সীমাবদ্ধ থাকবে এবারের পয়লা বৈশাখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর